ফেনী: চলমান বন্যায় ফেনী জেলার প্রাণিসম্পদ সেক্টরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যার কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৬৪ হাজার গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এই বিপুল সংখ্যক পশুর মৃত্যুতে জেলার প্রাণিসম্পদ খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯১ কোটি টাকায়। এই সংকট স্থানীয় কৃষক ও পশুপালকদের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
বন্যার কারণ ও প্রভাব
বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি আশেপাশের গ্রামের কৃষিজমি, বসতবাড়ি, এবং খামারগুলোতে ঢুকে পড়েছে, যার ফলে পশুদের রক্ষা করা অনেকাংশে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে খাদ্য, পানীয় জল, এবং পশুর জন্য জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহেও ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটেছে।
ক্ষতির চিত্র
প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ক্ষতিগ্রস্ত পশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এবং হাঁস-মুরগি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনেক খামারি তাদের খামারের সব পশু হারিয়েছেন, যা তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস ছিল। মৃত পশুদের সঠিক হিসাব এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ৬৪ হাজার পশুর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ খাতে আর্থিক ক্ষতি
সরকারি হিসেবে, প্রাণিসম্পদ খাতে এই বন্যার কারণে ৩৯১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পশুর মৃত্যু, পশুখাদ্য, পশু চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়ক সেবার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বিপুল ক্ষতির কারণে স্থানীয় অর্থনীতি এবং কৃষি খাতেও গুরুতর প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, তারা কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন এবং পুনরায় তাদের খামার পুনর্গঠন করবেন।
সরকারি পদক্ষেপ ও সহায়তা
সরকার এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, এ ধরনের বিপর্যয়ে আরও ত্বরিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন। তারা আশাবাদী যে, সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুততার সাথে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে।
ভবিষ্যতের করণীয়
স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও, এবং পশু স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে, যাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে না পারে। পশু চিকিৎসকদের দল ক্ষতিগ্রস্ত পশুগুলোর জন্য চিকিৎসা প্রদান করছে এবং মৃত পশুদের যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে, যাতে বন্যার পরে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা না দেয়।
উপসংহার
ফেনীতে এই বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে সৃষ্ট ক্ষতি জেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। তবে, আগামীতে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আরও কার্যকর প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।