জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক সোমবার তার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, “আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক এবং মানবিক দিক থেকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তারা আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করবে বলে আমাদের আশা।”
ডুজাররিকের এই মন্তব্যের পরই জানা গেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক তাৎপর্যপূর্ণ এক সফরে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা আসছেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সফরটিকে ঘিরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি। আগামী ৩০শে আগস্ট আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী দিবসের আগেই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সনদে যুক্ত হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ বছর ধরে গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশের প্রতি তাগিদ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার এই সনদে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। তবে, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে এবং নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো রকম শর্ত ছাড়াই গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
গুমবিরোধী সনদটি ২০০৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় এবং ২০১০ সালে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে। এই সনদের লক্ষ্য হলো গুম বন্ধ করা, অপরাধের দায়মুক্তি রোধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান করা।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ৯টি সনদের মধ্যে ৮টিতে সই করেছে। কিন্তু গুমবিরোধী সনদে এতদিন সমর্থন না করার কারণে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। তবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সনদে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের ঢাকা সফর দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সনদে সই করার পর, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের জন্য সরকার বা এর যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে জাতিসংঘ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।