সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় পরিবর্তন এসেছে। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ করেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন, যা অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত। বিশেষ করে তার দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী এই বিষয়টি জানতেন না, ফলে তারা হঠাৎ করেই বিপাকে পড়েন।
আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী শেখ হাসিনার এই আকস্মিক দেশত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। দলীয় নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা। কয়েকজন নেতাকর্মী এবং গোয়েন্দা সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেতাকর্মীরা জানান, শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপ তাদের হতবাক করেছে। তারা টেলিভিশনের মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে বিস্মিত হন। তারা বলেন, “আপা (হাসিনা) আমাদের ছেড়ে গেছেন। দেশ ছেড়ে তিনি দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।”
শেখ হাসিনার এই হঠাৎ দেশত্যাগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য নতুন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলোতে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালাচ্ছে। অনেক নেতা জানিয়েছেন, তারা এখন বাড়িতে থাকতে পারছেন না এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “আমরা সেনাপ্রধানের ভাষণের সময়ই কেবল বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পেয়েছি, যখন সবাই টেলিভিশনের সামনে বসে ছিল।” আরেক নেতা জানান, “আমাদের ধরা পড়লে হয়তো লোকজন আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারত।”
শেখ হাসিনার পতনের পেছনে দলের ভেতরের একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। তিনি বলেন, “চারজনের একটি দল শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।”
এই নেতার মতে, “এই চারজনের ওপর শেখ হাসিনার অন্ধবিশ্বাস ছিল, এবং তাদের কারণে তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা হারিয়েছেন।” উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনার এই আকস্মিক দেশত্যাগ এবং এর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।