বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভ পরিস্থিতি ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই উন্নতির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) মানদণ্ড BPM-6 অনুযায়ী, এই রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
এ ছাড়া, সরকারের যাবতীয় চলতি দায় বাদ দিয়ে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। IMF-এর শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ইতিমধ্যে পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।
ডলার সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক জানান, ডলার সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার রোধ, ঋণপত্র খোলায় মার্জিন বৃদ্ধিসহ কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার পাশাপাশি হুন্ডি প্রতিরোধ এবং রপ্তানি পণ্যের সঠিক হিসাব নির্ণয়ের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ডলার সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে এবং রিজার্ভের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস সরকারের ইতিবাচক প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের একটি ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রবাসীরা দেশে বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। ড. ইউনূস সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও বৈদেশিক ঋণ, অনুদান ও বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) বৃদ্ধির পথ সুগম করেছে।
এর ফলে, যেখানে জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী চলতি দেনা বাদ দিয়ে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল ১৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে তা বেড়ে ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।