একাধারে আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম আইন অঙ্গনে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাদের ঘিরে নানা মুখরোচক গল্প থাকলেও, আড়ালে বিচারাঙ্গনে প্রভাব খাটিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
তৌফিকা করিম বিচারাঙ্গনের একটি অঘোষিত ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে কাজ করতেন, যিনি উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত সর্বত্র বিচরণ করতেন। অভিযোগ রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোতে প্রভাব খাটিয়ে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো রায় প্রদান করাতেন এবং দুর্ধর্ষ আসামিদের জামিন করাতেন।
তৌফিকা করিম ও আনিসুল হকের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একক আধিপত্য কায়েম করেছিলেন। ফলে, আদালত অঙ্গনে নিয়োগ ও পদায়নের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন তারা। মন্ত্রীর নির্দেশনায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আদালতগুলোতে জনবল নিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে বেশিরভাগ নিয়োগপ্রাপ্তদের বাড়ি আনিসুল হকের নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। এছাড়া, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তৌফিকা করিমকে আনিসুল হক তার মালিকানাধীন সিটিজেন চার্টার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ ছাড়া, তৌফিকা করিম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেও নিযুক্ত ছিলেন।
ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আনিসুল হক গ্রেপ্তার হন এবং তৌফিকা করিম আত্মগোপনে চলে যান। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় তার ছেলের কাছে পালিয়েছেন, যেখানে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আনিসুল হকের সঙ্গে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এই জুটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের বিচার ব্যবস্থা ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তৌফিকা করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।