ডেস্ক রিপোর্ট
সকলের কণ্ঠ
বেতন–ভাতা বাড়ানো ও জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সোমবার সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা মেডিকেল ভাতা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষকরা সকাল ১০টা থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হন। তাঁদের ব্যানার–ফেস্টুনে লেখা ছিল—
“ন্যায্য দাবি মানতেই হবে”, “শিক্ষকের সম্মান, রাষ্ট্রের দায়িত্ব”, “বঞ্চনা নয়, অধিকার চাই।”
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেছেন,
“শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আমরণ অনশন চলবে। দেশের কোনো শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বা প্রশাসনিক কাজ করবেন না। পরীক্ষার ডিউটি, অফিস ফাইল, সবকিছু বন্ধ থাকবে।”
তিনি আরও বলেন,
“শিক্ষা উপদেষ্টা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। তাঁর প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। আন্দোলন চলবে, প্রয়োজনে এটি জাতীয়করণের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেবে।”
একই সময়ে আন্দোলনের মধ্যেই সরকারের অর্থ বিভাগ বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া হবে।
এই সুবিধা আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মরিয়ম মিতু স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,
“সরকারের বিদ্যমান বাজেট সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন,
“৫ শতাংশ নয়—আমাদের দাবি ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, এবং সেই দাবিতেই অনশন চলছে।”
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি-এর নেতৃত্বে সোমবার বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শহীদ মিনারে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বলে জানা গেছে।
গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন,
“বেসরকারি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আমরা সমর্থন করি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাঁদের জাতীয়করণের দাবি পূরণ করা হবে।”
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন,
“বিএনপি মহাসচিব আমাদের জানিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল এসে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেবেন।”
এর আগে গত ১২ অক্টোবর শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
তবে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর প্রতিবাদে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে এসে অবস্থান নেন এবং এবার আমরণ অনশন কর্মসূচিতে গেছেন।
শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী—
- মূল বেতনের ২০% হারে বাড়িভাড়া ভাতা
- ১,৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা
- উৎসব ভাতা ৭৫%
- দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণ
অনশনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দেশের কোনো বেসরকারি স্কুল–কলেজে ক্লাস, প্রশাসনিক কাজ বা পরীক্ষার ডিউটি হবে না।
এতে ইতিমধ্যেই কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে।
অধ্যক্ষ আজিজী বলেন,
“এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমরা আর পিছপা হব না। আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব।”
শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও, শিক্ষকরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, অর্থ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধাপে ধাপে শিক্ষকদের ভাতা ও সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, তবে বাজেট সংকটের কারণে তা সীমিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শিক্ষকদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে লিখছেন—
“যে শিক্ষক প্রজন্ম তৈরি করেন, তাঁরাই যদি অবহেলিত থাকেন, তবে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হবে।”
তবে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দীর্ঘমেয়াদী ক্লাস বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় ক্ষতি হতে পারে।
শিক্ষা-খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
বেসরকারি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন বেতন ও ভাতা-বৈষম্যের শিকার।
সরকারি শিক্ষকরা যেখানে সরকারি স্কেলে সুবিধা পান, সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই বৈষম্য দূর না হলে শিক্ষার মান প্রভাবিত হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারী আছেন, যাঁরা দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার প্রধান চালিকাশক্তি।
অর্থ বিভাগ বলছে, ১ নভেম্বর থেকে বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানো হবে, যা আন্দোলনের একটি অংশমাত্র পূরণ করবে।
তবে শিক্ষকরা বলছেন, তারা আংশিক সুবিধা নয়, পুরো দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না।
এদিকে সরকারও চাইছে না যে শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন ব্যাহত থাকুক। তাই আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ হয়নি।