ডেস্ক রিপোর্ট — সকলের কণ্ঠ
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর পোশাকশিল্পনগর তিরুপুর, যা ‘ডলার সিটি’ নামে পরিচিত, এখন কঠিন সংকটের মুখে। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্কের প্রভাবে মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে শহরটির শত শত পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ছয় লাখ শ্রমিক।
ভারতের রপ্তানিযোগ্য পোশাকের বড় অংশ আসে তিরুপুর থেকে। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা যেসব টি-শার্ট আমেরিকার ওয়ালমার্ট, টার্গেট বা সিয়ার্সে বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই এই শহরে তৈরি।
তবে শুল্ক আরোপের পর রপ্তানির প্রবাহ থমকে গেছে। স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতা জি সম্পথ জানান, “উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে।”
তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই শহর থেকে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
চাকরি হারানো শ্রমিকদের অনেকেরই কোনো লিখিত চুক্তি ছিল না, ফলে সহজেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে নিজ রাজ্যে। যারা এখনো কাজ করছেন, তাদের বেতন ৩০–৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে।
বিহার থেকে আসা শ্রমিক মনোহর সাহনি বলেন,
“আগে স্ত্রীসহ মাসে ৪৫০ ডলার আয় করতাম, এখন ২৫০ ডলারে নামিয়ে দিয়েছে। এই টাকায় পরিবার চালাব না ঋণ শোধ করব—বুঝতে পারছি না।”
সাহনি জানান, বাধ্য হয়ে তিনি কর্ণাটকে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন মাত্র ৪ ডলারে কাজ করছেন।
আমেরিকান আমদানিকারকেরা শুল্কজনিত মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন অর্ডার দিতে অনাগ্রহী। অনেকেই ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দাবি করছেন, যা ভারতীয় প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রায় অসম্ভব।
তিরুপুরের গীনা গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মোহন শঙ্কর বলেন,
“এখন আমাদের লক্ষ্য লাভ নয়, টিকে থাকা। নগদ প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। আমেরিকার জন্য অন্তত ৭০ শতাংশ উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছি।”
তিরুপুরের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির সাবেক চেয়ারম্যান মিল্টন অ্যামব্রোস জন বলেন,
“তিরুপুরের পণ্য সাধারণত সাশ্রয়ী দামে বিক্রি হয়—৫ থেকে ১০ ডলারের মধ্যে। এই দামে আবার ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম যেখানে মাত্র ২০ শতাংশ শুল্কে আমেরিকায় রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে, সেখানে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক দীর্ঘমেয়াদে দেশটির রপ্তানি প্রতিযোগিতা শক্তিকে বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।