ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতা স্পর্শ করার পরপরই সোনার দামে বড় ধস নেমেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনবিষয়ক মন্তব্য এবং ডলারের উত্থানের প্রভাবে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম হঠাৎই কমে যায় ২ শতাংশেরও বেশি। খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, স্বর্ণের এই পতন মূলত ট্রাম্পের নতুন মন্তব্য ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার অস্থির প্রতিক্রিয়ার ফল।
শুক্রবার দুপুরে (ইস্টার্ন টাইম অনুযায়ী ১টা ৩৮ মিনিটে) স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২১১ দশমিক ৪৮ ডলারে। এর আগে সেশন চলাকালে দাম উঠেছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৭৮ দশমিক ৬৯ ডলারে।
এর একদিন আগে, বৃহস্পতিবার, প্রথমবারের মতো স্বর্ণ ৪ হাজার ৩০০ ডলার সীমা অতিক্রম করেছিল।
যদিও শুক্রবার বড় পতন হয়েছে, তবুও সপ্তাহজুড়ে সোনার মোট বৃদ্ধি প্রায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন সোনার ফিউচারও ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে বন্ধ হয় ৪ হাজার ২১৩ দশমিক ৩০ ডলারে।
একই সময়ে ডলার সূচক (DXY) বেড়েছে ০ দশমিক ১ শতাংশ। এর ফলে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ডলার নির্ধারিত স্বর্ণের দাম আরও বেড়ে যায়, যা বাজারে চাপ বাড়ায়।
বিশ্লেষক তাই ওয়ং বলেন, “ট্রাম্পের আগের ঘোষণার পর তুলনামূলক নরম সুর বাজারে উত্তেজনা কিছুটা কমিয়েছে।”
শুক্রবার ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, তিনি শিগগিরই চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
স্বর্ণকে সাধারণত অনিশ্চয়তার সময়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এ ধাতুর দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশেরও বেশি। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয় বৃদ্ধি, ডলার থেকে বিনিয়োগ সরে যাওয়া এবং ইটিএফ ফান্ডে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এই উল্লম্ফন ঘটেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমার সম্ভাবনাও স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের পণ্যবাজার বিশ্লেষক সুকি কুপার বলেন, “আমরা ২০২৬ সালে স্বর্ণের গড় দাম ৪ হাজার ৪৮৮ ডলার ধরে রাখছি। তবে বাজারের কাঠামোগত সহায়তা থাকায় দাম আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।”
বাজারে ধারণা, ফেডারেল রিজার্ভ (Fed) অক্টোবর ও ডিসেম্বরে দুটি ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমাতে পারে।
অন্যদিকে এইচএসবিসি (HSBC) ২০২৫ সালের গড় স্বর্ণমূল্য পূর্বাভাস ১০০ ডলার বাড়িয়ে প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৪৫৫ ডলার করেছে এবং জানিয়েছে, ২০২৬ সালে এটি ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে।
এদিকে এশিয়ার বাজারে রেকর্ড দামে পৌঁছেও স্বর্ণের বাস্তব চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতের উৎসব মৌসুম সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের প্রিমিয়াম দশ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
শুক্রবার রুপার দাম ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্সে ৫১ দশমিক ২০ ডলারে; এর আগে এটি রেকর্ড ৫৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছিল। সপ্তাহ শেষে রুপার সামগ্রিক বৃদ্ধি ২ শতাংশে সীমিত রয়েছে।
প্লাটিনামের দাম কমেছে ৬ দশমিক ১ শতাংশে (প্রতি আউন্সে ১ হাজার ৬০৭ দশমিক ৮৫ ডলার), আর প্যালাডিয়ামের দাম কমেছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে (প্রতি আউন্সে ১ হাজার ৪৮৫ দশমিক ৫০ ডলার)।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের শক্ত অবস্থান ও ট্রাম্পের “অসম্ভব শুল্কনীতি” নিয়ে মন্তব্য স্বর্ণের বাজারে স্বল্পমেয়াদি চাপ তৈরি করেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণ এখনো সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে থাকবে—এ ব্যাপারে তারা একমত।