ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
বহুল আলোচিত জুলাই সনদে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ও ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। নতুন এই রাজনৈতিক সমঝোতা দলিলে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং গণঅভ্যুত্থান-সংক্রান্ত বিচারিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন যুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে (প্রতিস্বাক্ষরে) জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু জুলাই সনদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী এককভাবে আর সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা জারি করতে হলে বিরোধীদলীয় নেতা বা তার অনুপস্থিতিতে উপনেতার উপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনুমোদন নিতে হবে।
একই সঙ্গে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে—যেখানে “অভ্যন্তরীণ গোলযোগ” শব্দটির পরিবর্তে যুক্ত করা হবে “রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ” শব্দগুলো।
এ ছাড়া জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের দুটি মৌলিক অধিকার অলঙ্ঘনীয় রাখার কথা বলা হয়েছে—
১. জীবনের অধিকার (সংবিধান অনুচ্ছেদ ৩২)
২. বিচার ও দণ্ড সংক্রান্ত মৌলিক অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৫)
এখন পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতেন। বাস্তবে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। জুলাই সনদে এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জ্যেষ্ঠতার নীতি প্রয়োগের ঘোষণা এসেছে।
সনদে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
তবে বিএনপি এতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে—তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় গেলে সিনিয়র দুই বিচারপতির মধ্যে যেকাউকে নিয়োগের সুযোগ রেখে সংবিধানে সংশোধনী আনবে।
জুলাই সনদের শেষ মুহূর্তের সংশোধনে অঙ্গীকারনামার পঞ্চম ধারায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগের খসড়ায় বলা ছিল,
“গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বিচার এবং শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হবে।”
কিন্তু সংশোধিত ধারায় আরও নির্দিষ্ট ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে—
“গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।”
এছাড়া শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও আইনগত দায়মুক্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতিও যুক্ত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন।
এই সনদকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ত্যাগ ও রক্তদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণীত “নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।