রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে কোনো ধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হলে রাষ্ট্র বড় ঝুঁকিতে পড়বে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটা অ্যাফোর্ড করতে পারব না। রাষ্ট্রকে একটি ব্যালান্সড অবস্থায় থাকতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকি নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।”
সাবেক স্বৈরাচারী চক্র সুযোগ নিতে পারে বলে সতর্ক করে বিএনপি নেতা বলেন, “পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তাই আমাদের বাস্তবতার নিরিখে পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রতিবিপ্লবী হওয়া যাবে না।”
ইউনূস সরকারের প্রতি বিএনপির সমর্থন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমাদের সমর্থন আপনার প্রতি আছে, থাকবে, তবে এটা সীমাহীন নয়। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি, কিন্তু শর্তসাপেক্ষে। আমাদের প্রত্যাশা, আপনার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “মন্ত্রিপরিষদে ‘ক্যাবিনেট কমিটি’ করে বদলি–পদায়নের যে প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, এর কোনো প্রচলন নেই। সচিবালয়ে এখন এক ধরনের ‘রাজত্ব’ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন।”
জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে, তবে যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তা স্পষ্টভাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আকারে উল্লেখ থাকবে। তিনি বলেন, “আলোচনার উদ্দেশ্যই ছিল একমতের পাশাপাশি ভিন্নমতগুলো সংকলন করা, যাতে জনগণ প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে।”
তিনি আরও প্রস্তাব করেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজন করা হোক। তার ভাষায়, “গণভোট আগে বা পরে—ঘটনা একই। যদি একই দিনে ছোট্ট একটি ব্যালটে ভোট হয়, তাহলে সেটি সময় ও ব্যয়ের দিক থেকে সাশ্রয়ী হবে।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে এবং এরপর সেটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কমিশন তখন সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারকে দেবে।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বিএনপি সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। “আমরা চাই, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক,”—যোগ করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।