ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
৩৬ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সকাল থেকেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে মোট ১৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৬১টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ জন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে চাকসুর ২৬টি পদে লড়ছেন ৪১৫ জন প্রার্থী, আর হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬।
ভোটগ্রহণের জন্য ওএমআর ব্যালট পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানান, প্রতিটি ব্যালটে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড, যা শুধুমাত্র মেশিনে শনাক্ত করা সম্ভব।
ভোটযুদ্ধকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ, র্যাব, বিএনসিসি, রিজার্ভ ফোর্স, ফায়ার সার্ভিস, গোয়েন্দা সংস্থা, রোভার স্কাউট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা টিম। মাঠে থাকবেন পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ এক হাজার ৫০ জন পুলিশ সদস্য ও ৪০ সদস্যের র্যাব সাইকেল ইউনিট। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনাবাহিনীও সহায়তা করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের কারো প্রবেশাধিকার থাকবে না, কেবল অনুমোদিত ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারবেন।” তিনি আরও জানান, সাংবাদিকরা গোপন ব্যালট কক্ষ ছাড়া ক্যাম্পাসের সব স্থানে অবাধে চলাচল করতে পারবেন।
এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট, বাম সংগঠনগুলোর ‘দ্রোহ পর্ষদ’ ও ‘বৈচিত্র্য ঐক্য’, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র মসলিজ সমর্থিত সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, সুফিপন্থি ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন।
ভোটারদের জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে তিনটি গেট দিয়ে—কাটা পাহাড়, ৩ নম্বর গোডাউন ও শহীদ মিনারের দক্ষিণ আর্চওয়ে। বৈধ আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক পে স্লিপ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকক্ষে যাচাই শেষে দেওয়া হবে পাঁচটি ব্যালট পেপার, যা নির্ধারিত পেন ব্যবহার করে পূরণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সীমার বেশি ভোট দিলে সংশ্লিষ্ট পদে ভোট বাতিল হবে।
শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে বিশেষ শাটল ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আজ ১১ বার শাটল ট্রেন চলাচল করবে চট্টগ্রাম শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। পাশাপাশি ৩০টি বাস চলবে বিভিন্ন রুটে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন আশাবাদী—অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের মধ্য দিয়ে চবি শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন অধ্যায় রচনা করবে।