ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
মিশরের লোহিত সাগর উপকূলীয় শহর শার্ম আল-শেখে আগামী সোমবার (১৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’, যেখানে ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নেবেন। সম্মেলনটি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রোববার তুরস্কভিত্তিক গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার নতুন অধ্যায় সূচনা—এই তিনটি মূল লক্ষ্য নিয়ে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট দপ্তরের বরাতে জানা গেছে, এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতাদের। আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন—
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান (তবে তেহরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি), ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কাইর স্টারমার, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কোস্টা।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, ইসরাইল ও হামাস তাঁর প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে এবং প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি বন্দীদের ফেরত দেওয়া হবে। এই প্রথম ধাপ ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে গাজায় হামাসবিহীন একটি নতুন প্রশাসন গঠন, বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধাপটিই হবে গাজা সংকট নিরসনের মূল পরীক্ষামূলক পর্যায়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধারাবাহিক হামলায় গাজা উপত্যকা এখন কার্যত বসবাসের অযোগ্য অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, **শার্ম আল-শেখের ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’**কে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক গাজা সংকট নিরসনে সম্ভাব্য কূটনৈতিক মোড় হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, এই সম্মেলন থেকে যদি কার্যকর কোনো রোডম্যাপ তৈরি হয়, তবে তা শুধু গাজাই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।