ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
চট্টগ্রাম—সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক থাকা প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিট্যান্সযোদ্ধা আবদুল হামিদের (৪৫) নিথর দেহ শুক্রবার সকালে লাল-সবুজে মোড়ানো কফিনে দেশে পৌঁছে; পরিবার, প্রতিবেশী ও সহযোদ্ধাদের মধ্যে শোক ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। হামিদর মৃত্যুর কারণ ও ঘটনার বিস্তারিত বিষয়ে পরিবারের কাছে এখনও কোনও পরিষ্কার বর্ণনা বা আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।
রাউজানের মৃত আবদুস ছালামের ছেলে হামিদ গত বছর ১৯ জুলাই রাজধানী আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই আন্দোলনে’ অংশ নেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার করে। পরে আল-সদর কারাগারে বন্দি ছিলেন; পরিবারকে গত ২২ সেপ্টেম্বর তার কারাগারে মৃত্যু সম্পর্কে জানানো হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ পর শুক্রবার ভোরერ বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ১২৮ ফ্লাইটের মাধ্যমে লাশ আনা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় ইউএনও ও অন্যান্য কর্মকর্তা পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দ্রুতপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন।
হামিদের দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনুর আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “স্বামী শেষবার জেল থেকে ফোন করেছিলেন আগস্টের মাঝামাঝি — বলেছেন, ‘চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে’। এরপর আর কোনো খবর পাইনি; হঠাৎ শুনি সে মারা গেছে। কেন, কীভাবে—কারো কাছ থেকে কিছু জানানো হয়নি।” তাদের দুই সন্তান—একজন দশম শ্রেণির ছাত্র ও আরেকজন প্রাথমিকে—বাবার অনুপস্থিতিতে গুরুতর মানসিক কষ্টে রয়েছে।
বীরুশীল সহযোদ্ধা ও গ্রামের মানুষ হামিদের দাফনে উপস্হিত হয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানান। ভাই সোহেল বলেন, “ভাই শুধু পরিবারের ভরসা ছিল না, আমাদের গ্রামের গর্বও ছিল। আজ কবরের মাটি ঢেকে দিলাম, মনে হচ্ছে বুকটাই ঢাকছি—কিন্তু মৃত্যুর রহস্য জানা না থাকলে শান্তি নেই।”
স্থানীয় বিমানবন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, লাশ হস্তান্তরের পরও নিহতের মৃত্যু সম্পর্কে এখনও পরিবারের কাছে কোনো চিকিৎসা বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। পরিবার জানায় (দূতাবাসে বারবার খোঁজ নেওয়া হলেও তেমন স্পষ্ট তথ্য মেলেনি)।
দাফনের সময় গ্রামের মাঠে শত শত মানুষ ভিড় জমান; ঢাকার বহু সহযোদ্ধাও উপস্থিত ছিলেন। গ্রামের মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীরা হামিদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতাকে স্মরণ করে বলেন—তার মৃত্যুর ভেতরে অন্যায়ের ইঙ্গিত থাকলে তার হিসাব ইতিহাস কর্তাই দেবে।