ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
দেশের বাজারে আলুর দাম কমতে কমতে কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকায় নেমে এসেছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ সময় আলু বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আলুর দাম ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ কমেছে।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার গত ২৭ আগস্ট ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছিল এবং কোল্ড স্টোরেজ গেটে ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘোষণাটি কার্যকর হয়নি। বর্তমানে ১০ থেকে ১২ লাখ টন আলু কোল্ড স্টোরেজে পড়ে আছে, অথচ বিক্রির জন্য হাতে আছে মাত্র দুই মাস সময়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আব্দুল কাদের জানান, রাজশাহীর ভালো মানের আলুর পাইকারি দাম এখন ১৫ টাকা, আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। গতকাল তিনি রংপুর ও বগুড়ার আলু কিনেছেন ১৪ দশমিক ৩০ টাকায়, বিক্রি করছেন ১৬–২০ টাকা দরে। অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জের নিম্নমানের আলু ৮–৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা মূলত রেস্টুরেন্টগুলো ব্যবহার করছে।
আড়তদার বুরহান বলেন, “চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি হওয়ায় দাম কমছে। যেখানে এক ট্রাক আলু দরকার, সেখানে দোকানের সামনে দুই–তিন ট্রাক আলু অপেক্ষা করছে।”
আরেক আড়তদার আলী হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে বগুড়া, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল থেকে ১২–১৪ টাকায় আলু কিনতে হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের আলু ১০–১১ টাকায় কিনে গড়ে ১১ টাকার সামান্য বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে এত কম দামে বিক্রি করেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
এভাবে অস্বাভাবিক দামে পতনের কারণে কৃষকরা বড় লোকসানে পড়েছেন। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসেও দাম না বাড়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, গত মৌসুমে দেশে রেকর্ড ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। দেশের চাহিদা মাত্র ৯০ লাখ টন, ফলে উদ্বৃত্ত থেকে গেছে বিপুল পরিমাণ আলু। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৬২ হাজার টন আলু রপ্তানি করা হলেও, কোল্ড স্টোরেজে এখনও বিপুল পরিমাণ আলু জমে আছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানায়, উৎপাদিত আলুর বড় অংশ সরাসরি খাওয়ার কাজে ব্যবহার হয়, প্রায় ১০ লাখ টন বীজ হিসেবে, আর অল্প পরিমাণ যায় চিপস ও ক্র্যাকার শিল্পে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমের শুরুতে অনেক কৃষক ১১ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেছেন, যেখানে উৎপাদন খরচ ছিল ১৪ টাকা। উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের খরচ পড়েছে ২০–২২ টাকা পর্যন্ত।
মুন্সীগঞ্জের কৃষক রমজান আলী বলেন, “গত মাসে ৯ টাকায় আলু বিক্রি করেছি, অথচ উৎপাদন খরচ ছিল প্রায় ৩০ টাকা। এখন দাম আরও কমে গেছে।”
রাজশাহীর আলুচাষি নজিবুল্লাহ জানান, “আমার মতো অনেক কৃষক মূলধন হারিয়েছেন। যারা কোল্ড স্টোরেজে আলু রেখেছিলেন, তাদের খরচের টাকাই উঠছে না।”
গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ী এলাকার কৃষক শাকিরুল বলেন, তিনি সোয়া তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ৭৫ মণ উৎপাদন হলেও, খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা করে। এখনো কোল্ড স্টোরেজে তার ১১৪ বস্তা আলু পড়ে আছে, কিন্তু বর্তমান দামে সেই খরচই উঠছে না।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হাসেন আলী জানান, “হিমাগারে মানভেদে ১২–১৩ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম। সরকার আলুর দর নির্ধারণ ও ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে কৃষকরা আলু মজুত রেখে এখন বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
এদিকে টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সরকার এই মাসের শেষ দিক থেকে আলু কেনা শুরু করবে।