ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানীখ্যাত বারাণসী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী আসন, একসময় ছিল হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির অনন্য মিলনকেন্দ্র ও ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ির প্রাণকেন্দ্র। তবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতির কারণে শহরটির ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে।
৫৫ বছর বয়সী মো. আহমদ আনসারি গত দুই দশক ধরে বারাণসীর এক সরু গলিতে বেনারসি শাড়ি বুনে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আর মসজিদের আজানের সুরে মিশে থাকা তাঁর বুননের ছন্দ এখন থমকে গেছে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি ঘটে। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ভারত থেকে চাল ও সুতাসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের আমদানি সীমিত করে, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত ১৭ মে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাবার আমদানি বন্ধ করে দেয়।
ফলে বারাণসীর বেনারসি শাড়ির বাজারে ব্যাপক মন্দা নেমে আসে। একসময় বাংলাদেশের বিয়ে ও উৎসব মৌসুমে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও, এখন সেই বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
কোভিড-১৯ মহামারি ও সরকারের নতুন বাণিজ্যনীতি আগে থেকেই তাঁতশিল্পে আঘাত হেনেছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব। ফলে প্রায় অর্ধেক তাঁতি ও ব্যবসায়ী বারাণসী ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
ভারতে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বস্ত্রশিল্পের ওপর নির্ভরশীল, যা কৃষিখাতের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মক্ষেত্র।
আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ বেনারসি শাড়ি তৈরিতে লাগে প্রায় ছয় মাস। সূক্ষ্ম সোনা, রুপা ও সিল্কের জরির কাজের জন্য বিখ্যাত এসব শাড়ির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার টাকারও বেশি।
এ শিল্পে আরেকটি বড় ধাক্কা এসেছে গুজরাটের সুরাট শহর থেকে, যেখানে উন্নত পাওয়ার লুমে সস্তায় তৈরি শাড়ি বাজার দখল করে নিচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী তাঁতিরা টিকে থাকতে পারছেন না।
বারাণসীর ৬১ বছর বয়সী পাইকারি ব্যবসায়ী পবন যাদব জানান,
“ঢাকায় সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আমাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আগে বছরে প্রায় ১০ হাজার শাড়ি বাংলাদেশে পাঠাতাম। এখন রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রায় ১৭ হাজার ডলার পাওনা রয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদে নির্বাচিত নরেন্দ্র মোদির প্রতি স্থানীয় তাঁতি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, তিনি যেন বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে উদ্যোগ নেন এবং এই প্রাচীন শিল্পকে রক্ষা করেন।