🔶 ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা

ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ

ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও মানবতাবাদী চিন্তাবিদ আহমদ রফিকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে সর্বস্তরের মানুষ। শনিবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলে সেখানে জনতার ঢল নামে। ফুলেল শ্রদ্ধা, নীরবতা ও শোকসন্তপ্ত পরিবেশে মানুষ বিদায় জানায় ভাষা আন্দোলনের এই গর্বিত সৈনিককে।

শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শোকর‌্যালি বের হয়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে। সেখানেই আহমদ রফিককে শেষ বিদায় জানানো হয়।

জীবদ্দশায় তিনি নিজ দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য দান করে গেছেন—যা মানবসেবার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে দেহদান কার্যক্রম শেষে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। শেষ সময় পর্যন্ত তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

তার মৃত্যুতে দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন আহমদ রফিক। সে সময় তিনি ফজলুল হক হল, ঢাকা হল এবং মিটফোর্ডের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন।

সভা, সমাবেশ, মিছিল—সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ের অন্যতম সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।

১৯৫৪ সালে ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে আন্দোলন শুরু হয়, তখন ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র আহমদ রফিকের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং পরে ১৯৫৫ সালের শেষ দিকে প্রকাশ্যে ফিরে আসেন।

তবে দীর্ঘ সংগ্রামের পর এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করলেও তিনি চিকিৎসকের পেশায় যাননি। সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী আহমদ রফিক জীবনভর লেখালেখি, শিক্ষা ও সমাজসেবায় নিজেকে নিবেদিত রাখেন।

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক ছিলেন শুধু ভাষার জন্য লড়াই করা এক তরুণ নয়, বরং ছিলেন মুক্তবুদ্ধি, মানবিকতা ও শিক্ষার প্রতীক। তার জীবন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবে।

বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনার প্রতি তার অটল বিশ্বাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।

শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে, ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি যুগের প্রতিনিধি। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছিলেন ভাষাসংগ্রামী পরিবারের সদস্যরা, শিক্ষক সমাজ, রাজনীতিক, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্রছাত্রীসহ অসংখ্য মানুষ।

জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে আহমদ রফিকের অবদান যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় থাকবে।