ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
‘যারা অতীতকে মনে রাখে না, তারা অভিশপ্ত হয়ে থাকে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে’—দার্শনিক জর্জ সানতায়ানার এই উক্তি যেন আজকের আমেরিকার জন্য প্রযোজ্য হয়ে উঠেছে। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, চেঙ্গিস খান কিংবা নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের মতোই আজ আমেরিকার আধিপত্যও এক অদৃশ্য পতনের পথে।
একসময় সাম্রাজ্য বিস্তার বা রক্ষার প্রধান অস্ত্র ছিল সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক দাপট। তবে বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রগুলো একে অপরের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে, কেবল ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা শক্তি প্রদর্শন করে কোনো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই আধুনিক যুগে সাম্রাজ্য নির্মাণ কেবল কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আমেরিকার শক্তিশালী জোট ন্যাটো তার আধিপত্য কায়েমের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানসহ বহু দেশকে সমতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তিকে বহুগুণ বাড়ায়।
কিন্তু ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আগ্রাসী উত্থান সেই সহযোগিতামূলক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। অতীতে মানবিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আমেরিকার শক্তি আজ ভেঙে পড়ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
ইরাকে ভিত্তিহীন অজুহাতে আগ্রাসন চালানো থেকে শুরু করে ইসরাইলকে অন্ধ সমর্থন দেওয়া—এসব পদক্ষেপ আমেরিকার ভাবমূর্তিকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান দমননীতি কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে কাতারের মতো নিরপেক্ষ শান্তি-মধ্যস্থতাকারীর বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের আগ্রাসনে আমেরিকার নীরব সমর্থন বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ উসকে দিয়েছে।
ফলস্বরূপ, একসময় যেসব দেশ আমেরিকাকে নিজেদের অনিবার্য মিত্র মনে করত, তাদের অনেকে আজ মনে করছে—আমেরিকার আর প্রয়োজন নেই।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, আমেরিকার বর্তমান সংকটের সঙ্গে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের পতনের উপসর্গগুলো বিস্ময়করভাবে মিলে যায়। পার্থক্য শুধু সময়ের। রোমান সাম্রাজ্যের পতন হতে যেখানে প্রায় ১,০০০ বছর লেগেছিল, আমেরিকা তার মাত্র ২৫০ বছরের ইতিহাসের মধ্যেই শেষ ৫০ বছরে দ্রুত পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আদর্শ নীতি, সহযোগিতা আর মানবিক মূল্যবোধ একসময় আমেরিকার শক্তির মূল ভিত্তি ছিল। কিন্তু আজ সেই ভিত্তিই ভেঙে পড়ছে। ইতিহাসের শিক্ষা স্পষ্ট—যে সাম্রাজ্য অতীত ভুলে যায়, তার পতন অবশ্যম্ভাবী। আমেরিকা কি সেই পুনরাবৃত্তির পথে হাঁটছে? উত্তর খুঁজছে পুরো বিশ্ব।