পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ: ফাইনালে ওঠার লড়াই
এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে ভারত ইতিমধ্যেই দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে। শ্রীলঙ্কা দুই ম্যাচ হেরে ছিটকে গেছে টুর্নামেন্ট থেকে। এখন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে নির্ধারণ হবে দ্বিতীয় ফাইনালিস্ট। আজকের ম্যাচের জয়ী দলই ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচকে ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে।
বাংলাদেশের জন্য এ লড়াই একপ্রকার জীবন-মরণ ম্যাচ। কারণ, পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের অর্থ বিদায়। অন্যদিকে জয় মানেই স্বপ্নের ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলছেন না দলের নিয়মিত অধিনায়ক ও ওপেনার লিটন দাস। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বে রয়েছেন জাকের আলী। ম্যাচের শুরুতে টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে লিটন দাস একটি নির্ভরযোগ্য নাম। বিশেষ করে বড় ম্যাচে তার অভিজ্ঞতা ও আগ্রাসী ব্যাটিং দলকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে খেলতে না পারার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও মাঠে নামতে পারছেন না তিনি। ইনজুরির কারণে লিটনের বাইরে থাকা নিঃসন্দেহে দলের ব্যাটিং অর্ডারে বড় ধাক্কা।
তার বদলে ওপেনিংয়ে দায়িত্ব পড়েছে সাইফ হাসান ও পারভেজ ইমনের কাঁধে। এই দুই তরুণ ব্যাটারকে পাকিস্তানের গতিময় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে টিকে থাকতে হবে, এবং দলের জন্য ভালো সূচনা এনে দিতে হবে।
ভারতের বিপক্ষে বিশ্রামে ছিলেন অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ। মূলত পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকেই টার্গেট করে তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। আজকের ম্যাচে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে একাদশে। তার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে বাড়তি শক্তি যোগাবে।
তাসকিনের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান সাকিব মিলে তৈরি করেছেন পেস ত্রয়ী। অন্যদিকে স্পিন আক্রমণে যুক্ত হয়েছেন শেখ মাহেদী ও রিশাদ হোসেন।
আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে দলে থাকা ওপেনার তানজিদ তামিম, স্পিনার নাসুম আহমেদ ও অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তাদের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পেয়েছেন নুরুল হাসান সোহান, শেখ মাহেদী ও তাসকিন আহমেদ।
নুরুল হাসানের অন্তর্ভুক্তি ব্যাটিং অর্ডারে স্থিতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে শেখ মাহেদীর স্পিন বোলিং পাকিস্তানি ব্যাটারদের চাপে ফেলতে পারে।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে আছেন:
- সাইফ হাসান
- পারভেজ ইমন
- তাওহীদ হৃদয়
- শামীম হোসেন
- জাকের আলী (অধিনায়ক)
- নুরুল হাসান সোহান
- রিশাদ হোসেন
- শেখ মাহেদী
- তানজিম সাকিব
- তাসকিন আহমেদ
- মুস্তাফিজুর রহমান
পাকিস্তান অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছে। তারা খেলাচ্ছে:
- শাহিবজাদা ফারহান
- ফখর জামান
- সাইম আইয়ূব
- সালমান আঘা
- হুসেইন তালাত
- মোহাম্মদ হারিস
- মোহাম্মদ নওয়াজ
- ফাহিম আশরাফ
- শাহিন আফ্রিদি
- হারিস রউফ
- আবরার আহমেদ
পাকিস্তান সবসময়ই তাদের পেস আক্রমণের জন্য বিখ্যাত। শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফ ও ফাহিম আশরাফের মতো পেসাররা প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ভোগাতে পারেন শুরু থেকেই।
স্পিন বিভাগে আছেন আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ নওয়াজ। এই দুজনকে সামলাতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।
পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে ফখর জামান ও শাহিবজাদা ফারহান শুরুটা ভালো করতে পারলে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারে।
ফাইনালের সমীকরণ
আজকের ম্যাচ জিতলেই ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তান। ভারত ইতিমধ্যেই জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে। শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। ফলে এই ম্যাচটি কার্যত সেমিফাইনালের মতোই।
বাংলাদেশ জিততে পারলে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের সঙ্গে লড়বে। হারলে বিদায় নিতে হবে টুর্নামেন্ট থেকে।
বাংলাদেশের কৌশল স্পষ্ট—প্রথমেই পাকিস্তানের টপ অর্ডারকে চাপে ফেলা। তাসকিন ও মুস্তাফিজের ওপেনিং স্পেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যাটিংয়ে দলের ভরসা থাকবে তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলীর উপর। এছাড়া নুরুল হাসান ও শামীম হোসেনের কাছ থেকেও দায়িত্বশীল ব্যাটিং আশা করছে দল।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের লড়াই শুধু একটি ম্যাচ নয়, এটি একপ্রকার ফাইনালে ওঠার যুদ্ধ। লিটন দাস ও তানজিদ তামিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার না থাকা সত্ত্বেও দল আত্মবিশ্বাসী। জাকের আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যদি সঠিক কৌশল প্রয়োগ করতে পারে, তবে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব।
এই ম্যাচ শুধু খেলোয়াড়দের নয়, সমর্থকদের জন্যও এক বিশাল উত্তেজনার নাম। পুরো দেশ তাকিয়ে আছে আজকের লড়াইয়ের দিকে। জয়ী দলই মুখোমুখি হবে ভারতের—এশিয়া কাপের স্বপ্নের ফাইনালে।