ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রকল্প ঘিরে একের পর এক নেতিবাচক খবরে জনমনে উদ্বেগ বাড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বায়েক) ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়রা) এর অনুমোদন ছাড়া এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর শর্ত পূরণ না করে কোনোভাবেই উৎপাদনে যাওয়া হবে না।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হবে। প্রয়োজনে সময় লাগলেও তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রশ্নই আসে না।”
প্রকল্প সূত্র জানায়, সম্প্রতি আইএইএ’র বিশেষজ্ঞ দল রূপপুর প্রকল্পে প্রি-ওসার্ট (Pre-OSART) মিশন পরিচালনা করে। সফর শেষে সংস্থাটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ প্রকাশ করে। তিন মাসের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
আইএইএ তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করেছে—
১. অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ জোরদার করা।
২. প্লান্ট অপারেশনের মান বজায় রাখতে তত্ত্বাবধান ও কন্ডাক্ট অব অপারেশনস আরও উন্নত করা।
৩. কমিশনিং চলাকালীন যন্ত্রপাতি সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে অবনতি রোধ করা যায়।
সুপারিশ বাস্তবায়নের পর এবং বায়রা’র অনুমোদন সাপেক্ষে চুল্লিতে জ্বালানি লোডিং শুরু হবে। এর আগে কোনোভাবেই কেন্দ্র চালু করা যাবে না বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
পরীক্ষার ধাপ: নন-নিউক্লিয়ার ও নিউক্লিয়ার টেস্ট
রূপপুর প্রকল্পে দুটি ধাপে পরীক্ষা চলছে—
নন-নিউক্লিয়ার টেস্ট: ফুয়েল লোডিংয়ের আগে সম্পন্ন করতে হয়।
নিউক্লিয়ার টেস্ট: ফুয়েল লোডিংয়ের পর চালানো হয়।
প্রকল্পে প্রায় ১,৫০০টি নন-নিউক্লিয়ার টেস্টের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৯০০টি শেষ হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইএইএ’র পর্যবেক্ষণকে স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, আইএইএ কোনো গোপনীয় প্রতিবেদন দেয় না; বরং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করে।
এনপিসিবিএল এমডি ড. জাহেদুল হাছান বলেন, “আমরা বিন্দুমাত্র ঘাটতি বা ত্রুটি রেখে প্ল্যান্ট চালাব না। রূপপুর প্রকল্প শতভাগ নিরাপদ নিশ্চিত করতেই আইএইএ’র পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। ফাইনাল ওসার্ট মিশন শেষে অনুমোদন পাওয়া গেলে তবেই জ্বালানি লোডিং করা হবে।”
তিনি আরও জানান, অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং বাকি পরীক্ষাগুলো খুব অল্প সময়েই সম্পন্ন করা সম্ভব। তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং প্রি-ওসার্ট মিশনের প্রতিবেদন বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক এসেছে।
সবমিলিয়ে বলা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তার মূল ফোকাস নিরাপত্তা। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেই এ প্রকল্পে জ্বালানি লোডিং শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।