সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কোম্পানিকে কোটি টাকার কার্যাদেশ, তদন্তের নির্দেশ অর্থ উপদেষ্টার
ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
বেসরকারি খাতে সার আমদানির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, ঘুস, টেন্ডার জালিয়াতি ও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে ফের সমালোচনায় এসেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট এক ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলে নন-ইউরিয়া সার আমদানির (টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি) টেন্ডার আহ্বান করে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে এবার তা আহ্বান করা হয় প্রায় তিন মাস দেরিতে—২৪ জুলাই। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ সময় সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন সারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ৬ আগস্ট পর্যন্ত প্রস্তাব জমার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম আমদানিকারকদের নিজ উদ্যোগে প্রস্তাবিত দর জানিয়ে দেন। পরে ২১ আগস্টের মধ্যে ওই দামে সম্মতি দিতে বলা হয়।
৩ সেপ্টেম্বর রাতে নিয়ম ভঙ্গ করে সর্বনিম্ন দরের প্রস্তাব উপেক্ষা করে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও আর আর হোল্ডিংস, যেগুলো আমিনুর রশিদ খান ওরফে মামুনের মালিকানাধীন।
এমনকি অভিযোগ রয়েছে, কার্যাদেশ দেওয়া হয় তাদের প্রস্তাবিত দরের চেয়েও বেশি দামে—প্রতি টন ৮৪৮ ও ৮৭৪ মার্কিন ডলারে মোট ৪০ হাজার টন সার আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। যা সরকারি নীতিমালার (পরিপত্র ধারা ৮-গ) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “যদি অভিযোগ সত্য হয়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাতারাতি গোপনে কার্যাদেশ দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত করে নতুনভাবে আহ্বান করা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, লটারিং ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তা অনুসরণ না করা অর্থনৈতিক অনিয়মের প্রমাণ বহন করে।
তবে এসব অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম দাবি করেছেন, সার আমদানির প্রক্রিয়াটি ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। তার ভাষ্য, “এক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেলেও সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়নি। বরং আগে যেভাবে সিন্ডিকেট চলতো, এবার তা হয়নি।”
তিনি আরও জানান, সার আমদানির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা জমা দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, “দুর্নীতির যে অভিযোগ এসেছে, তা আমরা তদন্ত করছি। কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক মাসের জন্য এই কার্যাদেশ স্থগিত করেছে।