ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দেশের বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল) প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২৫ পদের মধ্যে ২০টি পদে বিজয়ী হয় ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা। অথচ ছাত্রদল কোনো পদেই জয় পায়নি, বরং প্রতিযোগিতায়ও টিকে থাকতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর জাহাঙ্গীরনগরে নতুন কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। তবে দীর্ঘ আট বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনার পর নতুন কমিটিতেও রাখা হয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। শুরু হয় আন্দোলন ও সমালোচনা, যা ক্রমে সংগঠনকে অচলাবস্থায় ঠেলে দেয়।
শাখা ছাত্রদলের মধ্যে অন্তত ছয়টি গ্রুপ সক্রিয় ছিল বলে সংগঠনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এসব গ্রুপিংয়ের কারণে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পদবঞ্চিতরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শীর্ষ পাঁচ নেতা টানা দশদিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেননি।
১৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছিরউদ্দিন নাসির ক্যাম্পাসে এসে দ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা করলেও তার সামনেই দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ দৃশ্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা পাঠায়।
জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে প্যানেল ঘোষণাতেও গ্রুপিংয়ের প্রভাব দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতেও দ্বন্দ্ব মেটানো সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত দরকষাকষির ভিত্তিতে অপরিচিত ও কম গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। ফলে প্রচারণা কার্যক্রমও গ্রুপভিত্তিক সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
একাধিক নেতার মতে, অনেকেই চাননি সংগঠনের কেউ নির্বাচিত হোক। কারণ নির্বাচিতরা নতুন কমিটিতে অগ্রাধিকার পেতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই তারা নীরব থেকেছেন।
শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের প্রভাবও ছিল ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণায়। ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিজেদের স্বার্থে প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি নির্বাচনের দিন অংশ না নেওয়া বা বর্জনের পরামর্শও দেন তারা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, ইতিবাচক রাজনীতির ধারা ফিরিয়ে না আনলে কোনো সংগঠনই শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ছাত্রদলের গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তাদের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট করেছে।