ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
জুলাই গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে তিনি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন।
এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে বিকেল পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে তা শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট সাক্ষ্য ও জেরার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় আগামীতে সাক্ষ্য দেবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার প্রায় চার ঘণ্টার সাক্ষ্যে মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার নানা প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন,
“মহান জুলাই ২০২৪ বিপ্লবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এক ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল একটি ম্যাটি কুলাস প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে, যেখানে বিদেশি শক্তিও জড়িত ছিল।”
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি দাবি করেন, জেনারেল মইনের সহযোগিতায় ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।
সাক্ষ্যে মাহমুদুর রহমান বিডিআর হত্যাকাণ্ড, সেনাবাহিনীকে ডিমরালাইজ করা, বিচারবিভাগকে দলীয়করণ, স্কাইপ কেলেঙ্কারি, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ভুয়া জাতীয় নির্বাচন, আয়নাঘর, গুম-খুনের সংস্কৃতি, জঙ্গি নাটক সৃষ্টি এবং তার নিজের ওপর নির্যাতনের ঘটনাসহ নানা ইস্যু ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী হিসেবে বিচার বিভাগ, আইনজীবী, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সেনাবাহিনী এবং গত ১৫ বছরের ডিজিএফআই প্রধান সরাসরি ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, চব্বিশের জুলাই বিপ্লব এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদন তার সাক্ষ্যে গুরুত্ব পায়।
মাহমুদুর রহমান সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন—শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট করে তোলায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও রাজনীতিবিদ ছাড়াও বিচার বিভাগ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকি, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নিজামুল হক এবং বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ফ্যাসিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করেছেন।
ডিজিএফআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দীক মূল ভূমিকা পালন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানিয়েছে, বুধবার অবশিষ্ট সাক্ষ্য প্রদান শেষে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের জেরার জবাব দেবেন মাহমুদুর রহমান। এরপর সাক্ষ্য দেবেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।