ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়লেও ভারতে অবস্থান করে তিনি একের পর এক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায়ই তিনি নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করছেন—‘বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন’। তবে সচেতন মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে ‘কাগুজে বাঘের’ তর্জন-গর্জন বলেই দেখছেন।
এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা আবারও ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ ছড়িয়ে দিচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, দুর্গাপূজার পর কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগের নিউটাউন শাখা হাসিনার দেশে ফেরার লড়াইয়ে নামবে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের গুম-খুনের দায় পাশ কাটিয়ে তাকে পুনরায় প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টায় ব্যস্ত ভারত ও তার প্রক্সি সংগঠনগুলো। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় করা হচ্ছে আওয়ামীপন্থি এজেন্সিগুলোকে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত প্রশ্ন—ফ্যাসিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সত্যিই দেশে ফিরছেন? ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশ এবং কলকাতার কিছু বুদ্ধিজীবীর তৎপরতা এই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (‘র’) হাসিনার পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের একটি সম্মেলনেও ‘র’-এর প্রত্যক্ষ সমর্থনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সারির কমিউনিস্ট নেতা গৌতম রায়। নিজ রাজ্যে রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হলেও, হাসিনার প্রশংসা করে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। এমনকি শেখ হাসিনা তার একটি বইয়ের ভূমিকাও লিখেছেন।
সম্মেলনে গৌতম রায় দাবি করেন, রাজনৈতিক জীবনে হাসিনাকে কাজের চাপে দুপুরে ভাত খাওয়ারও সময় পাননি; বেশিরভাগ সময় শুধু চা ও বিস্কুট খেয়েই দিন কাটিয়েছেন তিনি। গৌতম তার সরল জীবনযাত্রার প্রশংসা করে হাসিনাকে সুফিয়া কামাল, সুচিত্রা মিত্র ও গৌরী আইয়ুবের মতো নারীদের সঙ্গে তুলনা করেন।
শুধু সম্মেলন নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও চলছে হাসিনার পক্ষে প্রচারণা। অভিযোগ রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের একটি ওয়েব পোর্টাল নিয়মিত আওয়ামীপন্থি অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এর পরিচালক ধবল সরকার (ছদ্মনাম) নাকি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন। পাশাপাশি অসংখ্য ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সারকে অর্থ দিয়ে নানা বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার মুখের বুলি যতই তীব্র হোক না কেন, বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে মার্কিন প্রশাসনের শুল্ক নীতির চাপে আছেন। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
অন্যদিকে, দিল্লিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের দিল্লিতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। হাসিনার ঘনিষ্ঠ কলকাতার কিছু বুদ্ধিজীবীকেও দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে—আগামী দিনে কীভাবে মিডিয়ায় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা যায়। পূজার পরই কলকাতার হাসিনাপন্থি বুদ্ধিজীবীরা বড় পদক্ষেপ নিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, দিল্লিতে শেখ হাসিনার আশ্রয়স্থল থেকেই চলছে প্রোপাগান্ডার নীলনকশা। সেখানে প্রস্তুত হচ্ছে ভুয়া পুস্তক, বিভ্রান্তিকর ভিডিও ও পিডিএফ কনটেন্ট। এগুলো ঢাকাসহ কলকাতা ও দিল্লিতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে আক্রমণাত্মক প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মিডিয়া, আওয়ামী লীগপন্থি বুদ্ধিজীবী এবং গোয়েন্দা সংস্থার এ তৎপরতা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না—তা সময়ই বলে দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।