ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে আবারও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেও এখনো বহাল রয়েছে লেখা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত ও বিতর্কিত লেখক জাফর ইকবালের সম্পাদিত বই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি তা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাবিদরা একে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি বলে আখ্যা দিয়েছেন।
২০২৫ সালের প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বইটি এখনো বহাল রয়েছে, যেখানে রচনা ও সম্পাদনায় শীর্ষে রয়েছেন জাফর ইকবাল। তার নামের পরেই রয়েছে সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নাম। শিক্ষাবিদদের অভিযোগ, পাঠ্যপুস্তকের বেশিরভাগ লেখকই অতীতে ফ্যাসিবাদী শাসনামলের সহযোগী ছিলেন।
ফ্যাসিবাদ আমল থেকেই জাফর ইকবালের বইকে ঘিরে বিতর্ক ছিল। ২০২৩ সালে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের লেখা অনুবাদ করে নিজের নামে চালানোর অভিযোগ ওঠে। পরে সত্যতা প্রমাণিত হলে তিনি এবং অধ্যাপক হাসিনা খান প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।
জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় উঠলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী জানান, সময়ের অভাবে বইটি সরানো সম্ভব হয়নি। ফলে ২০২৬ সালেও একই অবস্থা বজায় থাকছে।
এনসিসিসির সদস্য আমান সুলাইমান বলেন, “জাফর ইকবাল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম সহচর ছিলেন এবং জুলাই বিপ্লবের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন। তাকে দিয়ে বই রাখা মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা।”
২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তকে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা তেমন প্রতিফলিত হচ্ছে না। শুধুমাত্র জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি বইয়েও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লেখা সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য বিতর্কিত বিষয় প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ অধ্যায়টি সংক্ষিপ্ত করার আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বহাল থাকতে পারে। দশম শ্রেণির ‘রহমানের মা’ গল্পটি পরিবর্তনের আলোচনায় রয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম জানান, এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ কমিটি আসলে পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য। সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, “২০১২ সালের কারিকুলামের ভিত্তিতে তৈরি বইগুলোতেই ফ্যাসিবাদী বয়ান রয়ে গেছে। আমূল পরিবর্তন ছাড়া এ সমস্যা দূর হবে না।”
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলেও বিতর্ক থামেনি। ২০২৫ সালের বইয়ে হাসিনার ছবি বাদ দেওয়া এবং জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি সংযোজন করা হয়েছিল। এবারও কিছু পরিবর্তন আনা হলেও বিতর্কিত লেখকদের নাম বহাল থাকায় ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তক নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।