ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এ প্রস্তাব অনুমোদনের লক্ষ্যে আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গণশুনানি আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সংস্থাটি জানায়, গণশুনানির দুই মাসের মধ্যেই নতুন দামের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগ পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুমোদন করে বিইআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে গ্যাস উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। আমদানি করা গ্যাসের সঙ্গে সমন্বয় করে কারখানাগুলোতে সরবরাহ করতে গেলে সরকারকে প্রায় ১০ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এ কারণে সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, চলতি ২০২৫ সালে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। দাম বাড়ানো হলে আরও সাতটি কার্গো আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্তমানে দেশে ছয়টি সার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ সার কারখানা পুরোনো ও বেশি গ্যাস খরচ হওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে। অপর পাঁচটি কারখানার দৈনিক গ্যাস চাহিদা ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ছয় মাস (অক্টোবর-মার্চ) প্রতিদিন পূর্ণমাত্রায় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তবে এপ্রিল-মে মাসে দৈনিক ১৬৫ মিলিয়ন, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করলে এলএনজি চার্জ বাদ দিয়ে আয় হবে ৪৪ হাজার ৩৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এতে ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঘাটতি থাকবে। সরকার যদি ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়, তাহলেও ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঘাটতি থেকে যাবে। তাই নতুন দাম নির্ধারণকে অপরিহার্য হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৩ কার্গো এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে হয়েছে। প্রতিবারই সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এবার দাম সমন্বয় করা হলে ভর্তুকির চাপ কিছুটা কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে দেশের কৃষিখাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, কৃষি একটি ভর্তুকিনির্ভর খাত। এ খাতকে বাণিজ্যিকীকরণের ধারাবাহিকতায় সরকার এগোচ্ছে। কিন্তু এর ফলে সারের দাম বাড়লে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও কৃষিকে সুরক্ষা দিয়ে সারের দাম বাড়ানো থেকে বিরত ছিল। অথচ বর্তমান সরকার একই ভুল নীতি অনুসরণ করছে। কৃষির জন্য পর্যাপ্ত ভর্তুকি নিশ্চিত না করলে উৎপাদন কমে যাবে, যা খাদ্য সংকট ডেকে আনতে পারে।”