১৯ বছর পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ
দীর্ঘ ১৯ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নির্বাচনের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
বাবরের এই প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ তিনি একসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০০৭ সালের ২৮ মে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার দীর্ঘ কারাবাস, মামলার রায় এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক অতীত তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। এবার তিনি আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পা রাখলেন, তবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে—একজন সাবেক মন্ত্রী হিসেবে নয়, বরং একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে।
বৈঠকে লুৎফুজ্জামান বাবর নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং লুট হওয়া সম্পদ ফেরত আনা অত্যন্ত জরুরি। তবে আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।”
তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গও আলোচনায় এসেছে। বাবর বলেন, “ইনশাআল্লাহ তিনি দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন। আমরা আশাবাদী।”
তার দাবি, প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনি সহযোগিতা করতে চান। কারণ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাবর বৈঠকে উল্লেখ করেন যে, পার্শ্ববর্তী দেশে বসে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বিশেষ শিল্পগোষ্ঠী বৈঠক করেছে। তার দাবি, এই গোষ্ঠী আসন্ন নির্বাচন বানচাল করতে চায়। যদিও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি, তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মন্তব্য নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
লুৎফুজ্জামান বাবর একসময় বাংলাদেশ রাজনীতির আলোচিত নাম। ২০০৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় তিনি অন্যতম আসামি ছিলেন। তবে ২০২৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে ওই মামলায় তিনি এবং আরও চারজন মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান।
এর আগে, ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন মামলায় তার সাজা হয়, যার মধ্যে দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল। দীর্ঘ কারাজীবনের পর আদালতের রায়ে খালাস পাওয়ার পর তিনি আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হতে শুরু করেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের ঘোষণা এলেও বিরোধী দলগুলোর দাবি, মাঠপর্যায়ে এখনো নানান ত্রুটি রয়েছে। বাবরের মতে, অবৈধ অস্ত্রের প্রবাহ বন্ধ করা এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
তিনি বলেন, “আমরা যদি নির্বাচনের সময় ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি, তবে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা জরুরি।”
বিএনপির অভ্যন্তরে বাবরের ভূমিকা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও তিনি দলে আগের মতো সক্রিয় নন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বৈঠকে তার উপস্থিতি প্রমাণ করছে যে, তিনি আবারও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাইছেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করার মাধ্যমে তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাবরের দীর্ঘ বিরতির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হওয়া কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এর পেছনে রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। তিনি সরকারকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগের একটি সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছেন।
তবে তার অতীতের মামলার ইতিহাস এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো বড় প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সত্যিই একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য কাজ করছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক অঙ্গনের বড় খবর। তিনি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আবার একই সঙ্গে সরকারের প্রতি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার আশাবাদ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা, এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ—সব মিলিয়ে বাবরের এই বৈঠককে ঘিরে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতের নির্বাচনী পরিবেশে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—বাবর আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরে এসেছেন।