ডেস্ক রিপোর্ট, সকলের কণ্ঠ:
অতীতে বিষয়বস্তুর গুরুত্বের চেয়ে সরকার সমর্থক কবি-সাহিত্যিক-লেখকদের রচনাই বেশি স্থান পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা থেকে বের না হলে শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘কেমন হবে পাঠ্যপুস্তক?’ শীর্ষক এক সভায় এ অভিমত দেন বক্তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় অভিযোগ করা হয়, তরুণদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসা সরকার শিক্ষা খাতকে উপেক্ষা করছে।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম ভোগবাদী ও বস্তুবাদী ধারায় এগোচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থাকলেও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমান্তরাল কাঠামো নেই।
সভাটি পরিচালনা করেন লেখক ও গবেষক তুহিন খান। এসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন,
> “কেমন পাঠ্যবই চাই– এর আগে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কেমন দেশ চাই। বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে, তাদের স্বপ্নের রাষ্ট্র কি আমরা গড়তে পেরেছি?”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, পাঠ্যবইয়ে পছন্দসই কবি-লেখকদের অন্তর্ভুক্ত করে গুণমানের পরিবর্তে ব্যক্তি-অপছন্দের জায়গা তৈরি করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত সরকারের আমলে কবি আল মাহমুদকে পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যদিও এতে তার সাহিত্যমান কমেনি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষার জোরে উন্নত হয়েছে, অথচ আমরা এখনও মানসম্মত শিক্ষা থেকে অনেক দূরে।”
লেখক ও গবেষক আবদুল জব্বার জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, “আমরা শিশুদের পাঠ্যবইয়ে ভূতের গল্প শিখাচ্ছি, অথচ ভূত বলে কিছু নেই। এভাবে তাদের মিথ্যা শেখানো হচ্ছে।”
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়বস্তুর চেয়ে সরকার সমর্থক কবি-সাহিত্যিকদের লেখা পাঠ্যবইয়ে স্থান পাচ্ছে। শেখ হাসিনার আমলে আল মাহমুদ, ফররুখ আহমদের মতো লেখকদের বাদ দিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও কবি কামাল চৌধুরীর লেখা সংযোজন করা হয়েছে। তার মতে, শিক্ষার উন্নয়নে এ ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ড. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, “গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে শিক্ষাক্রম থেকে ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষা সংকুচিত করা হয়েছে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন আইআইইউটির অধ্যাপক আমানউল্লাহ মুজাহিদ, শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সিনথিয়া জাহান আয়েশা।
বক্তারা সর্বসম্মতভাবে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় সমন্বিত ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত না হলে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।