ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ও তাঁর ছেলে রাইয়ান কবিরের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অর্থপাচার ও জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে কোম্পানি খুলে আমদানির আড়ালে ১৯৪ কোটি টাকা পাচার করেছেন তারা। শুধু তাই নয়, শেয়ার কেনা, ঋণের সুদ মওকুফ, সফটওয়্যার কেনায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্যও মিলেছে।
সিঙ্গাপুরে কোম্পানি খোলা ও অর্থ পাচারের তথ্য
২০১২ সালে রাইয়ান কবির ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত নাহার সিঙ্গাপুরে ‘আর অ্যান্ড এন হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি খোলেন। এর পরিশোধিত মূলধন ছিল ১৪ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার। বিএফআইইউর তদন্তে দেখা যায়, বৈধ পথে এই অর্থ নেওয়া হয়নি। অথচ সাউথইস্ট ব্যাংক ওই কোম্পানির নামে ১৭টি এলসি খোলে।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশবন্ধু গ্রুপ ও জারা জামান টেকনোলজির নামে এসব এলসি খোলা হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো পণ্য দেশে প্রবেশ করেনি। এভাবে পাচার হয় এক কোটি ৫৯ লাখ ডলার, যা বর্তমান মূল্যে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা।
দেশবন্ধু গ্রুপের বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে এক হাজার ১৬২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি হলেও আলমগীর কবির চেয়ারম্যান থাকাকালে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। তিনি টানা ২০ বছর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২4 সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পদচ্যুত হন। এর পর থেকেই দেশবন্ধু গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপি হয়।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, আলমগীর কবির চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর ছেলে রাইয়ান কবিরকে ব্যাংকের পরিচালক বানানোর জন্য ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। এই অর্থ দিতে রাইয়ান কোনো অর্থ দেননি। বরং ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে নিজস্ব অর্থ ব্যবহার করে শেয়ার কেনে। পরবর্তীতে তথ্য গোপন করে পরিচালক হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের মে মাসে তাঁকে বরখাস্ত করে।
রাইয়ান কবিরের শ্বশুরের প্রতিষ্ঠান লুব রেফ বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ব্যাংকটির কাছ থেকে ব্যাপক সুবিধা পায়। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ছিল ৪২ কোটি টাকা, অথচ সুদ মওকুফ করা হয় ৫৫ কোটি টাকা। ফলে ঋণস্থিতির চেয়ে ১৩ কোটি টাকা বেশি মওকুফ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। একইসঙ্গে ব্যাংকটিকে বাধ্য করা হয় ১০ টাকার শেয়ার ২৫ টাকায় কিনতে।
ব্যাংকের জন্য সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। পাশাপাশি ২০২১ সালে ব্যাংকটি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ স্থানান্তর করে, যার চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম।
অভিযোগের বিষয়ে আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কখনও কোনো অনিয়ম বা তহবিল তছরুপের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমাকে বেইজ্জতি করার জন্য এসব রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।” তবে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি রাজি হননি। রাইয়ান কবিরের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জবাব দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে আদালত আলমগীর কবির ও তাঁর ছেলে রাইয়ান কবিরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এদিকে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন।