৫ বছরের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ডা. শফিকুর রহমানের
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের রাজনৈতিক পরিসরে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট। দলটির দাবি, তারা কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাফরুল পশ্চিম থানা আয়োজিত এক সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দেওয়া তার এই বক্তব্য ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। দুর্নীতি, দুঃশাসন, অপরাধ ও অবিচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করছি।”
জামায়াতের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দেশের প্রধান সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাদের মতে, ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতিই পারে একটি সুশাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিত করতে
জামায়াত আমির বলেন, “জনগণ যদি সত্যের পক্ষে রায় দেয়, তবে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করা সম্ভব।”
তার মতে, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পক্ষেত্রে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিলে অল্প সময়েই দেশের চেহারা পাল্টে দেওয়া সম্ভব।
- দারিদ্র্য বিমোচনে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
- কৃষিখাতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
- স্বাস্থ্যসেবায় সমান সুযোগ সৃষ্টি।
- দুর্নীতি দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
- শিক্ষার প্রসারে বিপ্লব ঘটানো।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সব নাগরিক তাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করবে—এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন—
- সমাজে কোনো বিভাজন থাকবে না।
- নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
- সুশিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
- রাজনীতিতে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চা অব্যাহত থাকবে।
জামায়াত আমির বলেন, “সুশিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো রাষ্ট্র এগোতে পারে না। সুশিক্ষাই পারে মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করতে।”
তার মতে—
- শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে সমতাভিত্তিক।
- উচ্চশিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
- আগামী প্রজন্মকে নৈতিকতা ও আধুনিক দক্ষতায় শিক্ষিত করতে হবে।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “জুলাই বিপ্লব আমাদের সামনে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে এখনো শঙ্কা পুরোপুরি কেটে যায়নি। তাই আমাদেরকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে।”
এই বক্তব্যে তিনি রাজনৈতিক বাস্তবতায় জনগণের মধ্যে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তার প্রতিফলন তুলে ধরেন।
ডা. শফিকুর রহমান স্পষ্ট করে বলেন, ক্ষমতায় আসা মানেই ভোগ-বিলাস নয়, বরং জনগণের কাছে জবাবদিহি করা। তিনি মনে করিয়ে দেন—
- সবাইকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হলেও আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া যায় না।
- রাজনীতিতে নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা অপরিহার্য।
- যারা ক্ষমতায় যাবেন, তাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা জনগণকে ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশ দিতে পারেননি। অথচ একটি রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
তার মতে—
- জনগণকে ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশ উপহার দেওয়া যায়নি।
- সুশাসনের অভাবে জনগণ আস্থা হারিয়েছে।
- ভবিষ্যতের জন্য এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তার মতে, রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও জনগণের কল্যাণের প্রশ্নে সবাইকে একই প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
- জামায়াত তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যে ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনমত টানার চেষ্টা করছে।
- তবে এ প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, সেটিই বড় প্রশ্ন।
- পাঁচ বছরে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ, তবে বাস্তবে তা অনেক চ্যালেঞ্জিং।
জনগণের প্রতিক্রিয়ায় দেখা যায়—
- এক অংশ মনে করে, ন্যায়-ভিত্তিক সমাজের দাবি সময়োপযোগী।
- অন্য অংশ মনে করে, অতীতে জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান বিতর্কিত হওয়ায় জনগণের আস্থা অর্জন করা কঠিন হবে।
- তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট, তারা কেবল ক্ষমতার রাজনীতি নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সামনে রেখে কাজ করছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার জনগণের কাছে নতুন করে আশা জাগালেও তা বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জনগণের রায়ের ওপর।
তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন ন্যায়বিচার, সুশিক্ষা, সুশাসন ও জনআস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিই সবচেয়ে জোরালো। আর এই জায়গাটিতেই জামায়াত নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে।