ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
ভারতের রাজনীতিতে প্রভাবশালী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সম্পর্ক সবসময় ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে অস্বস্তিকর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি ও আরএসএস নেতৃত্বের এই চাপা দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে ভারতের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিজেপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সঞ্জয় জোশী।
সঞ্জয় জোশীকে ঘিরে দ্বন্দ্ব
সঞ্জয় জোশী এক সময় নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ হলেও পরে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। ২০০৫ সালে এক বিতর্কের জেরে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিজেপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু আরএসএস, বিশেষ করে মোহন ভাগবত চেয়েছিলেন তাকে আবার সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে। অন্যদিকে, মোদি সেই প্রস্তাবে অনীহা প্রকাশ করেন। এখান থেকেই শুরু হয় দ্বন্দ্বের সূক্ষ্ম রেখা।
সূত্র মতে, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার স্থলাভিষিক্ত হিসেবেও সঞ্জয় জোশীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন সংঘ। কিন্তু মোদি ঘনিষ্ঠ মহল তা মেনে নিতে রাজি হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দ্বন্দ্ব কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের সংঘাত। আরএসএস সবসময় সামগ্রিক বা সমষ্টিগত নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। বিপরীতে, মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ক্রমশ ‘ওয়ান-ম্যান-শো’-তে পরিণত হয়েছে, যেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকেই।
এছাড়া বিজেপির ভেতরে প্রচলিত ৭৫ বছর বয়সে অবসরের অলিখিত নীতি নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত। মোদি-অমিত শাহের এই নীতি প্রয়োগের ফলে লালকৃষ্ণ আদবানী ও মুরলী মনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতাদের সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরানো হয়েছে। অনেক প্রবীণ আরএসএস নেতা মনে করেন, এভাবে অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে পাশে সরানো ঐতিহ্যবিরোধী।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদি বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, যেখানে আরএসএস-এর প্রভাব সীমিত হবে। অপরদিকে, আরএসএস চাইছে দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের ঐতিহ্যগত প্রভাব বজায় রাখতে। ফলে সঞ্জয় জোশীকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সংঘের ভেতরে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
মোহন ভাগবত প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, তার অনুসারীরা অভিযোগ করছেন—মোদি পরিকল্পিতভাবে আরএসএস-এর প্রভাব দুর্বল করছেন। অন্যদিকে, মোদির ঘনিষ্ঠ মহল মনে করে, বর্তমান যুগে শক্তিশালী একক নেতৃত্ব ছাড়া নির্বাচনে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়, আর মোদির জনপ্রিয়তাই তার প্রমাণ।
বাহ্যিকভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও, বিজেপি ও আরএসএস নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতার এই লড়াই ভারতের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে চলতি সেপ্টেম্বরেই নরেন্দ্র মোদি ও মোহন ভাগবত দু’জনেরই বয়স ৭৫ পূর্ণ হচ্ছে। ফলে কে আগে অবসর নেবেন, কিংবা আদৌ নেবেন কিনা—এ নিয়েই সচেতন মহলে চলছে নানা জল্পনা।
ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাই এখন প্রধান প্রশ্ন—আরএসএস ও বিজেপির এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সামনের দিনে কোন রূপ নেবে?