৩৪ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে নাটকীয়তার শেষ নেই, শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান সন্ধ্যায় জানান, ভোট গণনায় লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল প্রকাশের চেষ্টা চলছে। তাঁর আশাবাদ, রাতের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এই আশ্বাসের মাঝেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা কাটছে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৫ সালে আবারও এ নির্বাচন আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করে। ক্যাম্পাসে এ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ভোটের দিন এবং ভোট গণনা নিয়ে নানা জটিলতা পরিস্থিতিকে নাটকীয় করে তুলেছে।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল ও পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা বাতিল হওয়ায় ম্যানুয়ালি গণনার কাজ চলছে। প্রক্টর জাকির আহমেদ বলেন, “ফলাফলের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে সময় বেশি লাগছে।”
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিশনের দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এই ধীরগতি। ফলে ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
শাহবাগে আয়োজিত শিবিরের বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল প্রকাশে দেরি করছে। তাঁরা দ্রুত ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান এবং প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
একজন নেতার বক্তব্যে উঠে আসে: “শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারকে উপহাস করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। ফলাফল নিয়ে টালবাহানা আর সহ্য করা হবে না।”
ফলাফল প্রকাশ নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিনেট ভবন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, “যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। কেউ যেন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।”
শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “৩৪ বছর পর নির্বাচন হলো, অথচ ফলাফল প্রকাশে এই বিলম্ব পুরো প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আস্থা নষ্ট করছে।”
অন্যদিকে অনেকে মনে করছেন, ম্যানুয়াল গণনায় সময় লাগলেও সঠিক ফলাফল পাওয়া গেলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ৩৪ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব এবং বিভিন্ন প্যানেলের বর্জন এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন, “যদি প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে ফলাফল প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে। এতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী রাজনীতির প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এখনো হয়নি। ফলাফল প্রকাশে ধীরগতির কারণে ক্যাম্পাস থেকে রাজধানীর শাহবাগ পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল প্রমাণ করছে, শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করলে তা আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।
ফলাফল প্রকাশের পর এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও ভবিষ্যত ছাত্ররাজনীতির গতিপথ কোন দিকে যাবে—সেটিই এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।