মুনিয়া হত্যাকাণ্ডে বিচার না পাওয়ার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুনরায় বিচার প্রার্থনা করেছেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, মামলাটি প্রভাবিত করতে বড় অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতায় অভিযুক্তরা বেঁচে গেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই এই হত্যার বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন বলে জানিয়েছেন নুসরাত জাহান তানিয়া। আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নুসরাত বলেন, তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একাধিকবার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি।
তানিয়া অভিযোগ করেন, “আমি যখন গুলশান থানায় মামলা করতে যাই, তখন থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে কিনে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তৎকালীন আইজিপি বেনজির আহমেদ ও গুলশান থানার ওসি সুদীপ কুমার নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীতে গুলশান থানা আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।”
তানিয়া আরও বলেন, “আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রায় ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমাকে সাক্ষাৎ দেননি। আমি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস পেতো না।”
তানিয়া জানান, মামলাটি প্রভাবিত করার জন্য পিবিআই প্রধান বনজ কুমারকেও ঘুষ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে আনভীরসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি নারাজি জানালে সেটাও আদালতে খারিজ হয়ে যায়।
তিনি অভিযোগ করেন, “মুনিয়া গর্ভবতী ছিলেন, পিবিআই তাদের তদন্তেও বলেছে যে সন্তানটি আনভীরেরই ছিল। অথচ আনভীরকে স্যাম্পল টেস্ট করতে বলা হয়নি।”
তানিয়া বলেন, “মামলার অন্যান্য আসামি যেমন সাইফা মিম ও পিয়াসাকে গ্রেপ্তার করা হলেও আনভীরকে একবারের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। অর্থাৎ বিচারের নামে তামাশা হয়েছে। এত অন্যায় ও অবিচারের পরেও আমি আনভীরদের হুমকি, টাকা ও প্রলোভনের কাছে বিক্রি হইনি।”
এসময় তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার ছেলে আনভীরকে গ্রেপ্তার করে মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন।
মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নুসরাত জাহান তানিয়ার দাবি ও অভিযোগগুলো বিচার বিভাগের প্রতি গভীর প্রশ্ন তুলে ধরেছে। ন্যায়বিচারের জন্য তার এই দীর্ঘ সংগ্রাম এবং অভিযোগগুলো সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তানিয়া।