আমাকে কি ফজু পাগল মনে হয়: ফজলুর রহমান
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিদিনই নতুন নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্য। এর মধ্যে সর্বশেষ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। এক ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আমাকে কি ফজু পাগল মনে হয়?”— যা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি দলীয় একটি কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফজলুর রহমান তার প্রতি করা কিছু সমালোচনা ও প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন। তার অভিযোগ, তাকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে এবং তার অবস্থানকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা চলছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেই তিনি প্রশ্ন তোলেন— “আমি কি ফজু পাগল? আমার কাজকর্ম, বক্তব্য, সংগ্রাম— সবই দেশের মানুষ ও দলের জন্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমার চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে।”
এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। অনেকে মন্তব্য করেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে ফজলুর রহমানের এ ধরনের আবেগঘন প্রকাশ অস্বাভাবিক নয়। তবে অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হওয়া এই বক্তব্যের ক্যাপশন দেওয়া হচ্ছে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপসহ। কেউ লিখছেন, “রাজনীতি পাগল বানিয়ে দিচ্ছে সবাইকে”, আবার কেউ বলছেন, “ফজু ভাই আসলে পাগল নন, কিন্তু সিস্টেম তাকে এমন অবস্থায় এনেছে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্তমানে এক অস্থির সময় অতিক্রম করছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনী পরিস্থিতি, বিরোধী দলের কর্মসূচি, সরকারের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন— সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম। এ অবস্থায় বিএনপির ভেতরে-বাইরে নানা সমালোচনা, ভিন্নমত এবং নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই অস্থিরতার মধ্যেই ফজলুর রহমানের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করা নতুন কিছু নয়। তবে যখন তা জনসম্মুখে আসে, তখন তা রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি করে। কারও মতে, ফজলুর রহমান তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য আবেগী বক্তব্য দিয়েছেন। আবার কেউ মনে করছেন, দলের ভেতরে চাপের মুখে তিনি এমন মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তিকে খাটো করা বা অপমানজনক মন্তব্য ছড়ানো নতুন কিছু নয়। ফজলুর রহমান হয়তো এরই প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তাকে পাগল মনে করা হচ্ছে। তবে এর মাধ্যমে তিনি একটি ভিন্ন বার্তা দিয়েছেন— তার প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে।”
ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশ নিয়েছেন এবং বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অনেকের মতে, তার অবস্থান সবসময়ই স্পষ্ট এবং সাহসী। তবে দলের ভেতরে বিভক্তির রাজনীতির কারণে তিনি বারবার সমালোচনার মুখে পড়েন।
ফজলুর রহমানের সমর্থকরা বলছেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে হেয় করা হচ্ছে। এক সমর্থক বলেন, “ফজু ভাইকে পাগল ভাবার প্রশ্নই আসে না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। এখন তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে।”
অন্যদিকে তার বিরোধীরা মনে করছেন, এ ধরনের মন্তব্য করে তিনি নিজের অস্থিরতা প্রকাশ করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিপক্ষ দলগুলোও এ ঘটনাকে হাতছাড়া করেনি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন যে, বিএনপির নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের মতে, “যেখানে একজন নেতা নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সেখানে জনগণের আস্থা টিকবে কীভাবে?”
বড় বড় জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালগুলোতেও ফজলুর রহমানের বক্তব্যটি সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। টকশোগুলোতে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এ ঘটনাকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে গ্রহণ করলেও রাজনৈতিকভাবে এর প্রভাব অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতাদের কথার গুরুত্ব অনেক। একেকটি শব্দ বা মন্তব্য নতুন ইস্যু তৈরি করে। “আমাকে কি ফজু পাগল মনে হয়” মন্তব্যটি হয়তো হঠাৎ ক্ষোভ থেকে বলা, কিন্তু এটি যে রাজনীতির মাঠে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে, তা স্পষ্ট।
বাংলাদেশের রাজনীতি আবেগ ও প্রতীকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ফজলুর রহমানের মতো অভিজ্ঞ নেতার বক্তব্যও সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়— এই মন্তব্য কি কেবল ক্ষোভ প্রকাশ, নাকি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে? সময়ই বলে দেবে, তার এই প্রশ্ন রাজনীতির ময়দানে কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।