সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র: শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে নতুন এক সংবাদ। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জনের ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যেও শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই একে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে, রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদল ঘিরে ষড়যন্ত্র চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গোপন বৈঠক, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও অস্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচির ইঙ্গিত মেলেছিল। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে একটি অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।
এই প্রেক্ষাপটেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ২৮৬ জন রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা একটি ঐতিহাসিক নাম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নাম নিষেধাজ্ঞার তালিকায় উঠে আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি আইনি পদক্ষেপ নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্যও বড় ধরনের বার্তা বহন করছে। শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থক ও বিরোধী উভয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দাবি করছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতারা বলছেন, অতীতে করা অনিয়ম ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ অনিবার্য ছিল।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন
- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারা
- কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য
- ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা, যারা দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত
- প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা
- ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা
এছাড়া কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির নামও তালিকায় যুক্ত আছে বলে জানা গেছে, যারা দেশের বাইরে বসে সরকারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক অনুসন্ধানে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে বলা হচ্ছে—
- আন্তর্জাতিক লবিং: বিদেশি কিছু শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয়েছে।
- অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি: বাজারে কৃত্রিম সংকট, ডলার সংকট এবং বিনিয়োগে ভীতি তৈরি করা হয়েছে।
- রাজনৈতিক সহিংসতা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প এলাকা এবং জেলা শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল।
- প্রচারযুদ্ধ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এ ঘটনায় বিস্মিত। রাজধানীর একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এমন পদক্ষেপ আগে কখনো দেখেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “যারা দেশের রাজনীতিতে সবসময় প্রভাবশালী ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এভাবে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসা সত্যিই অবিশ্বাস্য।”
একজন ব্যবসায়ী বলেন, “এতে বাজারে নতুন ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। কারণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অনেক বড় শিল্পপতির নামও শোনা যাচ্ছে।”
বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য বিরোধী দল এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, “এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে আন্দোলন দমন করতে সরকার এই ধরনের নাটক সাজিয়েছে।”
অন্যদিকে জামায়াতের এক নেতা বলেন, “যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকে জনগণকে বঞ্চিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জনগণের স্বস্তি দেবে।”
নিষেধাজ্ঞার খবরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাড়া পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই এ ঘটনাকে বড় শিরোনামে প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ অবশ্যই আইনের শাসন ও স্বচ্ছ তদন্তের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সরকারের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রাজনীতি বিষয়ক গবেষক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “এটি একদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চাপে রাখবে, অন্যদিকে দেশের ভেতরে একটি নতুন ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করবে।”
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে অনেকবার রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার বা কারাদণ্ড হয়েছে। তবে একইসঙ্গে প্রায় তিন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করার ঘটনা খুবই বিরল।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে কিছু সামরিক শাসক একাধিক নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তবে এত বড় পরিসরে নয়।
সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে এবং ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব ফেলবে—তা এখনই স্পষ্ট নয়।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত: দেশের মানুষ আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছে।