সকলের কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিরা ক্ষমতা দখল করেছে বলে দাবি করেছেন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের বক্তারা। তাদের অভিযোগ, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু বিদেশি শক্তি ভূমিকা রেখেছে। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পর হাজার হাজার সংখ্যালঘু হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আইএসআইএস’র মতো জঙ্গি সংগঠন এখন প্রকাশ্যে বাংলাদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স নিউজ আয়োজিত “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব” শীর্ষক সেমিনারে এ বক্তব্য উঠে আসে। দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সেমিনারে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিনিধি এবং চারজন বাংলাদেশি রিসোর্স পারসন অংশ নেন (তবে তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন)।
বক্তাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি ও আহম্মদিয়া সম্প্রদায়ও আক্রান্ত হয়েছেন। ড. আবুল হাসনাত মিল্টন বলেন, “ইউনূস সরকার জঙ্গিদের মুক্ত করে দিয়েছে, আইএসআইএস এখন প্রকাশ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তৎপর।”
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারা বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য বড় হুমকি।
ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মনোরাজ সিং মান মূল প্রবন্ধে বলেন, “১৯৭১ সালে ভারতের ত্যাগের ভিত্তিতে দু দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে হবে। তবে পানি বণ্টনসহ কিছু ইস্যুতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।” তিনি ভারতের জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা দূর করার পরামর্শ দেন।
মেজর জেনারেল (অব.) সুধাকর জি মনে করেন, “জুলাই-আগস্টের ঘটনা এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে চীনের প্রভাব এখন বড় ইস্যু।”
লে. জেনারেল (অব.) পিসি নায়ার মন্তব্য করেন, “৫ আগস্টের ঘটনা ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ, যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার পতনে ভূমিকা রেখেছে।” অন্যদিকে ব্রিগেডিয়ার (অব.) ভিপি সিং বলেন, “চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের অভিন্ন স্বার্থ ভারতের জন্য ত্রিমুখী নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।”
সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, ড. আবুল হাসনাত মিল্টন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ এবং ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা বর্তমানে হুমকির মুখে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদ বলেন, “জুলাই বিপ্লবের নামে ৩৬ দিন ধরে সন্ত্রাসীদের অভিযান চলে। ৫ আগস্টের পর হাজার হাজার সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে আছেন।”
ভারতীয় বক্তাদের অনেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে সরাসরি ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি আখ্যা দেন। তবে কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দেন।