পরীমণির তীব্র সমালোচনায় আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা অপু বিশ্বাস আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সিনেমা জগতের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও সরব ছিলেন। তবে এবার তার রাজনৈতিক অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তন ঘিরে চলছে তুমুল বিতর্ক। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
অপু বিশ্বাস যিনি একসময় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় দলকে সমর্থন করেছেন, এমনকি সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন— সেই অপু বিশ্বাসের হঠাৎ বিএনপির মঞ্চে উপস্থিতি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত চমকে দিয়েছে।
অপু বিশ্বাসের রাজনৈতিক যাত্রা নতুন কিছু নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সরাসরি রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। সরকারি অনুদানের সিনেমা থেকে শুরু করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ— সবকিছুতেই তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে অংশ নিতেন এবং সেই সময় তাকে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই দেখা হতো।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পর অপু বিশ্বাসের অবস্থান দ্রুত পাল্টে যায়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তাকে বিএনপির মঞ্চে দেখা যাওয়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে নিছক কাকতালীয় নয়, বরং সুবিধাবাদী রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই অপু বিশ্বাসকে সরাসরি ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের যুক্তি, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান বদলে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তিনি ছিলেন তাদের পাশে, আর এখন বিরোধী দলের শক্তি বাড়তেই সেখানে ঝুঁকেছেন।
অন্যদিকে, তার কিছু সমর্থক দাবি করছেন, একজন নাগরিক হিসেবে যে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে যোগ দেওয়া তার ব্যক্তিগত অধিকার। তবে সময় এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তার এই পদক্ষেপ জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
চিত্রনায়িকা পরীমণি সরাসরি অপু বিশ্বাসের নাম না নিলেও সামাজিক মাধ্যমে তার তীর্যক মন্তব্যে পরিষ্কার বোঝা যায় কাকে উদ্দেশ্য করে তিনি কথা বলেছেন। ফেসবুক পোস্টে পরীমণি লিখেছেন—
“আগে ছিল ৬ মাস হিন্দু ৬ মাস মুসলিম। এখন ৬ মাস আওয়ামী লীগ, ৬ মাস বিএনপি। পল্টিবাজ, সুবিধাবাদি কারে বলে দিদি কিন্তু দেখিয়ে দিলেন। বাপরে বাপ, কি জিনিস এটা।”
মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে তার পোস্টে ৪০ হাজারের বেশি রিয়েকশন ও প্রায় ৮ হাজার মন্তব্য আসে। অনেকেই পরীমণির বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে অপু বিশ্বাসকে সমালোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেক তারকাকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকতে দেখা যায়। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অবস্থানও পাল্টে যায়। তবে সামাজিক মাধ্যমের যুগে এই পরিবর্তনগুলো আরও দ্রুত প্রকাশ্যে আসে এবং জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়।
বিএনপি শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, জনপ্রিয়তার কারণে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থীরা এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন।
ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ এ বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন। অধিকাংশ মন্তব্যে অপু বিশ্বাসের অবস্থান পরিবর্তনকে ‘রাজনৈতিক সুযোগসন্ধান’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, জনগণের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, আর সে সুযোগকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন কিছু তারকা।
অন্যদিকে, কিছু দর্শক দাবি করছেন, চলচ্চিত্রের মানুষদের উচিত রাজনীতিতে জড়ানোর আগে জনগণের আস্থা অর্জন করা। শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র অঙ্গনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বহু নায়ক-নায়িকা সংসদে গেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন কিংবা ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আন্তরিকতা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন থেকে গেছে।
অপু বিশ্বাসের সাম্প্রতিক ঘটনা সেই প্রশ্নকে আরও সামনে নিয়ে এসেছে। তিনি একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, আর এখন বিএনপির মঞ্চে দাঁড়ানো তার রাজনৈতিক অবস্থানের দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করেছে।
অপু বিশ্বাসের এই রাজনৈতিক পালাবদল শুধু বিনোদন জগতে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনেও বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার এই অবস্থান পরিবর্তনকে কেউ দেখছেন সুবিধাবাদী পদক্ষেপ হিসেবে, আবার কেউ বা নাগরিক স্বাধীনতার অংশ হিসেবে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, জনসাধারণের চোখে তিনি এখন বিতর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র।
পরীমণির সরাসরি সমালোচনায় সেই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে। ভবিষ্যতে অপু বিশ্বাস কী সিদ্ধান্ত নেন এবং কোন রাজনৈতিক দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।