ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের গভীর তাৎপর্যময় আহ্বান
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে এক বাণীতে বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার মুক্তি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের যে আলোকবর্তিকা স্থাপন করেছেন তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন ন্যায়বিচার কখনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য সীমিত নয়; বরং তা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার।
তিনি তাঁর বাণীতে বলেন, আইনের শাসন, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী (সা.) সর্বদা অনন্য আদর্শ হিসেবে মানবজাতিকে পথ দেখাচ্ছেন। ১২ রবিউল আউয়াল মুসলিম বিশ্বসহ শান্তিপ্রিয় সব মানুষের কাছে অসাধারণ তাৎপর্যময় দিন, কারণ এ দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ব মানবতার ত্রাণকর্তা।
প্রধান বিচারপতির ভাষ্যমতে, মহানবী (সা.)-এর জীবন শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশক। তাঁর প্রতিটি কর্মকাণ্ড ছিল সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা ও সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিরপেক্ষতা ও নৈতিক দৃঢ়তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে দেখা যায়, ইসলামের প্রাথমিক সমাজে তিনি একাধিকবার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যেখানে প্রভাবশালী কিংবা বিত্তবানদের প্রতি কোনো ধরনের পক্ষপাত দেখানো হয়নি। বিচারকার্যের সময় তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল—সবার জন্য সমান আইন ও সমান বিচার নিশ্চিত করা।
ড. রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগে কর্মরত প্রত্যেক সদস্যের জন্য মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা কেবল নৈতিক প্রেরণাই নয়, বরং পেশাগত দায়িত্ব পালনের অন্যতম ভিত্তি হওয়া উচিত। কারণ, আইন প্রয়োগ বা বিচার পরিচালনা তখনই সঠিক হয় যখন তা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হয়।
মহানবী (সা.) যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেখানে সামাজিক মর্যাদা, বংশপরিচয় কিংবা সম্পদের প্রভাবকে কখনোই স্থান দেওয়া হয়নি। আধুনিক যুগে বিচারকদেরও সেই আদর্শকে সামনে রেখে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী শুধু একটি ধর্মীয় দিন নয়; এটি বিশ্ব মানবতার মুক্তির ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরব উপদ্বীপে তাঁর জন্ম হয়। তিনি এমন সময়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন যখন সমাজ ছিল অন্যায়, বৈষম্য ও অশান্তিতে পরিপূর্ণ।
১২ রবিউল আউয়াল একইসাথে তাঁর জন্মদিন ও ওফাত দিবস হওয়ায় দিনটির তাৎপর্য আরও গভীর। মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দিনটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মহিমার সঙ্গে পালন করে।
প্রধান বিচারপতির বাণীতে মদিনার সনদের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি উল্লেখ করেন, মহানবী (সা.) মদিনার রাষ্ট্র পরিচালনায় এমন এক সনদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে মুসলমান, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত ছিল।
আজকের বাংলাদেশে, যেখানে বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ বাস করে, সেখানে এই শিক্ষা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। ভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা এবং সৌহার্দ্য গড়ে তুললে সমাজ আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ হবে।
ড. রেফাত আহমেদ তাঁর বাণীতে আহ্বান জানান—আমরা যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করে সমাজে বৈষম্য, বিদ্বেষ ও অন্যায় দূর করি। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ন্যায়বিচার, সততা ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় অবদান রাখা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য। কিন্তু যদি সমাজে বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতি বিদ্যমান থাকে, তাহলে উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাবে না। তাই মহানবীর (সা.) ন্যায়পরায়ণতার আদর্শই আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক সংকট, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও বৈষম্যের সময়ে মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন, যুদ্ধ শুধু আত্মরক্ষার জন্য বৈধ, কখনোই আক্রমণের জন্য নয়। দয়া, ক্ষমাশীলতা এবং মানবিক মর্যাদা তাঁর জীবনধারার মূলনীতি ছিল।
বিশ্ব আজ যদি মহানবীর (সা.) শিক্ষা অনুসরণ করে তবে ঘৃণা, সন্ত্রাস ও অন্যায়ের পরিবর্তে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
মহানবী (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সার্বজনীন মানবিক শিক্ষা। প্রধান বিচারপতির বাণীতে প্রতিফলিত হয়েছে—তিনি শুধু মুসলিম উম্মাহ নয়, সমগ্র মানবজাতির মুক্তির জন্য অনন্য আলোকবর্তিকা
ঈদে মিলাদুন্নবী আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সহনশীলতা এবং সাম্যের আদর্শ এখনো অটুট এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য। তাই সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবতার মুক্তির জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।