ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপ করায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে নতুন মেরূকরণ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ভারতের ওপর। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য সহযোগী হলেও হঠাৎ করে আরোপিত এই শুল্ক ভারতের অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন নয়াদিল্লি চীনসহ অন্যান্য বাজারে বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় এ সফরকে বিশ্লেষকরা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন সমীকরণ হিসেবে দেখছেন। কেউ এটিকে কৌশলী পদক্ষেপ বললেও, কেউ বলছেন এটি দিল্লির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এক পথ।
একসময় ট্রাম্পকে “বন্ধু” সম্বোধন করেছিলেন মোদি। এমনকি ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ের জন্য ভারতের কিছু মানুষ বিশেষ পূজার আয়োজন করেছিলেন। অথচ সেই ট্রাম্পই ভারতের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। গত ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তে ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। ডলারের বিপরীতে রুপির দর নেমে গিয়ে রেকর্ড ৮৮.১৫ এ পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রতিবছর ভারত প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করত। যা ছিল আমেরিকার তুলনায় তিন গুণ বেশি। কিন্তু নতুন শুল্কের কারণে চলতি অর্থবছরে ভারতের রপ্তানি ৩৫ বিলিয়ন ডলার কমতে পারে বলে বিবিসি জানিয়েছে। এর ফলে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি অভ্যন্তরীণ বাজারে রপ্তানিকারকদের কর ছাড়সহ নানা প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। দিল্লিভিত্তিক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিসিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “ভারত প্রতীকী জবাব হিসেবে চীন, জাপান ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। বহু মেরুর পৃথিবীতে এটাই প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত।”
বাণিজ্যের পাশাপাশি ভিসা নীতিতেও ভারতীয়দের জন্য কঠোর বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, এইচ১বি ভিসার নিয়ম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, এই ভিসা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ভারতীয় নাগরিকরা।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, “ভারত দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক দিয়ে আমাদের ক্ষতি করেছে। এখন তারা বলছে কোনো শুল্ক নেওয়া হবে না। তবে আমরা চাপ না দিলে তারা কখনোই এই প্রস্তাব দিত না।”
অন্যদিকে, মার্কিন আদালত ট্রাম্পের আরোপিত অনেক শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবুও সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ অপরিহার্য।