ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারে বড় পরিবর্তন আনল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার থেকে প্রচারণায় কোনো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। একই সঙ্গে রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন ও ব্যানারও করা যাবে না। তবে বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে সীমিত আকারে—একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
ইসির আচরণ বিধিমালা-২০২৫ অনুযায়ী, পরিবেশবান্ধব প্রচারণা নিশ্চিত করতেই এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেই পোস্টার বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিলবোর্ড প্রচারণা এবার নতুনভাবে যুক্ত হলেও এর সংখ্যা ও আকার সীমিত রাখা হয়েছে।”
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি বিলবোর্ডের মাপ সর্বোচ্চ ১৬/৯ ফুট হতে পারবে। বিলবোর্ড এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে এবং পরিবেশ বা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি না হয়।
নির্বাচনী প্রচারণার সময়সীমা থাকবে তিন সপ্তাহ।
সব প্রার্থীর জন্য একদিনে এক মঞ্চে ইশতেহার পাঠের ব্যবস্থা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
গণমাধ্যমে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিতে পারবেন প্রার্থী ও তার প্রতিনিধিরা, তবে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা যাবে না।
ভিভিআইপি তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের (যেমন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ সদস্য, মেয়র, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ইত্যাদি) নির্বাচনী প্রচারে নামা নিষিদ্ধ।
ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না।
দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন, তবে কোনো লিফলেট বা ব্যানার ঝোলানো নিষিদ্ধ।
ভোটকেন্দ্র থেকে ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ করা যাবে না।
মাইকে প্রচারের ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে, সময় সীমা প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
প্রচার ও ভোটগ্রহণকালে সামাজিক মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণামূলক বা উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করলে প্রার্থী, রাজনৈতিক দল এমনকি গণমাধ্যমও শাস্তির আওতায় আসবে।
প্রচারের আগে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে সামাজিক মাধ্যমের অফিসিয়াল নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল ঠিকানা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে সামাজিক মাধ্যমের প্রচারে বিনিয়োগও নিষিদ্ধ।
আচরণবিধি ভঙ্গ করলে প্রার্থিতা বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সঙ্গে আগের মতো ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান বহাল রাখা হয়েছে। নারীদের লক্ষ্য করে সাইবার বুলিং রোধেও আলাদা শর্ত যোগ হয়েছে। বিদেশে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণা চালানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “প্রার্থীরা ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না—এমন বিধান আচরণবিধিতে যুক্ত করা হয়েছে।”
গত ১১ আগস্ট ইসির সভায় আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।