ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজির ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এর প্রভাবে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে সাধারণ মানুষ বেশি করে ডিম কিনছেন। ফলে ডিমের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দামও উর্ধ্বমুখী।
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার খামারি জাহিদুল ইসলাম (৩৮) বলেন, “ছয় মাস ধরে ডিমের দাম কম থাকায় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। এখন চাহিদা বেড়ে দাম কিছুটা বাড়ায় খামারিরা স্বস্তি পাচ্ছেন।” তিনি জানান, বর্তমানে খামারিরা প্রতি ডিম ৯.৫ টাকায় বিক্রি করছেন, অথচ উৎপাদন খরচ প্রতি ডজন ডিমে প্রায় ১০.২৫ থেকে ১০.৫০ টাকা। জাহিদুলের ৮,৫০০ লেয়ারের খামার থেকে প্রতিটি ডিম ৭ টাকায় বিক্রি করতে গিয়ে টানা লোকসান গুনতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে ২০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন তিনি।
মধুপুরের শৈলবাইত এলাকার খামারি মজনু মিয়া (৩৩) জানান, অনেক খামারি টানা লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে উৎপাদন ১৫–২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। “সবজির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বাড়ছে। তবে প্রান্তিক খামারিদের টিকতে হলে ডিমের ফার্মগেট মূল্য অন্তত ১১ টাকা হওয়া জরুরি।”
মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন (২৪) বলেন, তার পরিবারের খামার লোকসানে চলছে। যদিও দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে তিনি আশঙ্কা করছেন এই ধারা টিকবে না ২–৩ মাসের বেশি।
অন্যদিকে সখিপুরের মসজিদের ইমাম ও ব্যবসায়ী মাওলানা জাহিদুল ইসলাম (৩৮) প্রতিদিন গাজীপুর ও ঢাকায় প্রায় ৪০ হাজার ডিম সরবরাহ করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদা বাড়লেও দামের ওঠানামায় তার তেমন প্রভাব পড়ে না, কারণ তিনি খুচরা বিক্রি করে স্থিতিশীল লাভ পান। দাম বাড়াতে কোনো সিন্ডিকেটের প্রভাব আছে কিনা প্রশ্নে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে দাম বাড়াতে বা কমাতে বলেনি।”
ঘাটাইলের ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন (৫৮) বলেন, গত শীত মৌসুমে প্রচুর শাকসবজি থাকায় ডিমের দাম হঠাৎ পড়ে যায়। তখন ডিম কিনে পাইকারি বাজারেও লোকসান গুনতে হয়েছিল। কোনো সিন্ডিকেটের প্রভাবের অভিযোগ তিনি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন।
বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “ডলারের উচ্চ মূল্য, খাদ্য উপকরণের ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজার অস্থিরতার কারণে ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছিল না। উৎপাদকরা সরকারের নির্দেশনা মেনে ডিম বিক্রি করলেও, নির্ধারিত কম দর খামারিদের লোকসান ঠেকাতে পারেনি।” তিনি আরও জানান, খামারিদের সুরক্ষা দিতে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের সঙ্গে অন্তত ৩০ শতাংশ মুনাফা যোগ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে তারা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪.৫ কোটি ডিম উৎপাদিত হলেও চাহিদা ৫ কোটি। ফলে চাহিদা-সরবরাহের এই অমিল এবং সবজির দামের উর্ধ্বগতি মিলেই ডিমের বাজারে চাপ তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সবজির ক্ষতি হলে ডিমের চাহিদা বাড়ে—এটাই দীর্ঘদিনের প্রবণতা। তবে খামারিদের জন্য টেকসই মূল্য নির্ধারণ না হলে ডিম উৎপাদন ধীরে ধীরে সংকটের দিকে যেতে পারে।