ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
রাজধানীতে সরকারি ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী দামে চাল-আটা কিনতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নন, তীব্র দামের চাপে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁও বিজি প্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে ওএমএস ট্রাক থেকে পাঁচ কেজি আটা ও পাঁচ কেজি চাল কিনে ফিরছিলেন রাহেলা বেগম। ষাটোর্ধ্ব এই নারী জানান, “বাজারে অনেক দিন ধরেই চালের দাম বেশি। সরকারি চাইল কিনলে কিছু টাকা বাঁচে। তাই কষ্ট হলেও দূর থেকে আসি।”
তবে সবাই যে সুবিধা পাচ্ছেন তা নয়। বেগুনবাড়ি থেকে আসা সাজেদা বেগম মাত্র পাঁচ কেজি আটা কিনে হতাশ হয়ে পড়েন। ট্রাক চলে যাওয়ায় আর কিছু কেনা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আসা-যাওয়া রিকশাভাড়া ৬০ টাকা খরচ। মাত্র পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারলাম। লাভ হইল কী?”
একজন বিক্রয়কর্মী জানান, ট্রাকটির আসল জায়গা ছিল বিজি প্রেসের স্টাফ কোয়ার্টার। কিন্তু স্থান খুঁজে না পেয়ে তারা সামনের রাস্তায় পণ্য বিক্রি শুরু করেছিলেন। পরে স্টাফ কোয়ার্টারের লোকজন আসায় খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট স্থানে চলে যান।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি ট্রাকের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ১৫০ টন চাল এবং ১৪০ টন আটা সরবরাহ করা হয়েছে।
সরকারি নির্ধারিত দামে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩০ টাকা ও খোলা আটা ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা চাইলে শুধু চাল বা শুধু আটা কিনতে পারেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫৫–৬০ টাকা এবং খোলা আটা ৪৫–৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে ওএমএস থেকে কিনলে একজন ক্রেতা পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটায় ২৩০ থেকে ২৯০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারছেন।
এই সাশ্রয়ের জন্যই তীব্র রোদে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সদস্যরাও লাইনে দাঁড়িয়ে চাল-আটা সংগ্রহ করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান জানান, ডায়াবেটিসের কারণে তাঁকে নিয়মিত রুটি খেতে হয়। বাজারে আটার দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ওএমএস ট্রাক থেকে আটা কিনতে এসেছেন তিনি।
অন্যদিকে রাহেলা বেগম জানান, সরকারি চাল একটু মোটা হলেও খারাপ নয়। তবে ভালো করে ধুয়ে রান্না করতে হয়।
খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, “খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চাল, আটা ও ভুট্টা বিক্রির এখতিয়ার আছে। ভুট্টা এখন দেওয়া সম্ভব নয়। টিসিবি অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছে। তাই ওএমএসের মাধ্যমে চাল-আটা বিক্রি করা হচ্ছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে ক্রমবর্ধমান দামের চাপে সরকারের এই উদ্যোগ কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তবে সীমিত সরবরাহের কারণে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরছেন।