আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলো সচল করাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই মুহূর্তে দলটির সব মনোযোগ দুটি বিষয়ে—এর একটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং দল নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াত আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে নির্বাহী আদেশে দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত।
জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা ও নিবন্ধন—দুটি বিষয়ে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করছেন।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের বৈঠকে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা কোন বৈধতায় সম্মানিত উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ওই বৈঠকে তাৎক্ষণিক একজন উপদেষ্টা এ বিষয়ে জামায়াতকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রে আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে বলে জামায়াত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দেন। ওই দিন আদালতে জামায়াতের করা আপিলের পক্ষে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর (গত ২ মে মারা গেছেন) ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান। তবে আদালত ওই আবেদন আমলে না নিয়ে আপিল খারিজ করে দেন। এর মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। এখন নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াত আবার আপিল বিভাগে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপরদিকে, ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর তিন দিন পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেই দৃশ্যপটে আসে জামায়াত। ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় জামায়াত। এরপর ১২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের প্রতিনিধিদল।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, “নিবন্ধনের বিষয়ে আমরা আইনি পথেই এগোব। আশা করি, আদালতে আমরা সুবিচার পাব।” দল নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, “যারা নিষিদ্ধ করেছে, তারা অবৈধ সরকার ছিল। তাদের এই ঘোষণা আমরা মানি না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ গঠন ও পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা চেয়েছে, এবং আমরা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছি।”
জানা গেছে, নিবন্ধন ফেরানো এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের মনোভাব ইতিবাচক বলে জামায়াতের নেতারা মনে করছেন।