৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতির মাঠ। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। এই ঘটনার সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া জানাতে মাঠে নেমেছে জুলাইযোদ্ধাদের অন্যতম প্ল্যাটফরম ‘দ্য রেড জুলাই’, যারা শুধু নিন্দাতেই থেমে থাকেনি; বরং রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দীনের পদত্যাগ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়েছে।
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সদস্যসচিব মো. সজিব হোসাইন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি এবং নতুন করে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক।
সংবাদ সম্মেলনে সজিব হোসাইন বলেন,
“গতকাল আমাদের নেতা ভিপি নুরের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা সংঘটিত হয়েছে, তা আমাদের সবার জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। তথ্য পাওয়া গেছে, এই হামলায় সরাসরি জড়িত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ধরনের নিপীড়ন আমরা কখনো সহ্য করব না।”
তিনি অভিযোগ করেন, এই হামলার নেপথ্যে দায় রয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির। তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ হামলার জন্য দায়ী। তাই অবিলম্বে তাদের পদত্যাগের দাবি জানান।
রেড জুলাইয়ের সদস্যসচিব আরো বলেন,
“আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি হাসিনার গৃহপালিত নেতা জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। জনগণের রক্ত দিয়ে যারা ক্ষমতার খেলায় মেতে থাকে, তাদের কোনো রাজনৈতিক বৈধতা থাকতে পারে না।”
এ বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জাতীয় পার্টিকে সরাসরি দায়ী করে সংগঠনটি তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সজিব হোসাইন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
“দ্য রেড জুলাইয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হচ্ছে, যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করেন, আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব এবং বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি সংঘটিত করব।”
তিনি আরও আহ্বান জানান জুলাইযোদ্ধাদের প্রতি—
“সব জেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আগামী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকুন। কঠোর আন্দোলনের প্রয়োজনে আমাদের বাধ্য হতে হবে, যা পুরো দেশকে জাগিয়ে তুলবে।”
এই সময় রেড জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিদরাতুল মুনতাহা, সংগঠক রোজা, সদস্য শান্ত এবং ঢাকা দক্ষিণের সদস্যসচিব রিদ্ধ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই নুরের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচার ও রাজনৈতিক দায় নির্ধারণের দাবি করেন।
এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। একদিকে গণ অধিকার পরিষদ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে, অন্যদিকে রেড জুলাই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের মতো কঠিন শর্ত সামনে এনেছে। এর ফলে আগামী কয়েক দিন দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রভাব বা পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, কেউই দায় থেকে রেহাই পাবে না। আহতদের চিকিৎসায় একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,
- রেড জুলাইয়ের আলটিমেটাম আসন্ন সময়ের আন্দোলনকে আরও ঘনীভূত করবে।
- রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিরল ও স্পর্শকাতর দাবি।
- জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ ও জি এম কাদেরের গ্রেপ্তারের দাবি দলটির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।
- নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নতুন গতি সঞ্চার করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নুরের ওপর হামলার নিন্দায় ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন তরুণ নেতার ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আবার অনেকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে রেড জুলাইয়ের দাবিকে সমর্থন করছেন।
নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। দ্য রেড জুলাই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও জি এম কাদেরের গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়ে রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সরকারের অবস্থান ও রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে আন্দোলনের গতি কোন দিকে যাবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এই ঘটনা একটি বড় মোড় পরিবর্তনকারী অধ্যায় হয়ে থাকবে।