নুরের ওপর হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধের দাবি।
রাশেদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
১. গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
২. নেতাকর্মীদের ওপর হামলার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে নুরসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার দায় কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।
এদিকে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়—
- নুরুল হক নুরের ওপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে।
- এই ধরনের সহিংসতা ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটের ওপর আঘাত।
- ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সম্পন্ন হবে।
- প্রভাব বা পদমর্যাদা যাই হোক, জড়িত কোনো ব্যক্তি জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পাবে না।
- স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নুর ও অন্যান্য আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একটি বিশেষায়িত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও রাখা হবে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, নুরের মাথা ও নাকে আঘাত রয়েছে। সিটিস্ক্যান করা হয়েছে এবং তিনি আইসিইউতে আছেন। ৬ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তার চিকিৎসার জন্য। আগামী ৪৮ ঘণ্টা না গেলে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নুরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সহনশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে মব কালচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার মতো কোনো ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নুরকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনার পরিণতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা শুধু দুটি দলের সংঘর্ষ নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং চলমান রাজনৈতিক উত্তরণের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবিটি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবার সহিংস ঘটনার বিচার নিয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত।