বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিন্দা, দ্রুত তদন্তের আহ্বান
রাজধানীর কাকরাইল আবারও রাজনৈতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হলো। শুক্রবার রাতে হঠাৎ উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে। এতে গুরুতর আহত হন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নুরের মাথায় আঘাত লাগায় সিটিস্ক্যান করা হয়েছে এবং ৬ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা তদারকি করছে। যদিও জ্ঞান ফিরেছে, তবে চিকিৎসকদের মতে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রম না হলে সঠিক অবস্থা বলা সম্ভব নয়।
এই হামলার ঘটনায় প্রথম প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
তিনি লেখেন,
“নুরুল হক নুরের ওপর হামলা এবং কাকরাইলে সংঘটিত সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপি। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি অত্যন্ত নাজুক সময়ের মধ্যে আছি, যার প্রথম পদক্ষেপ হলো জাতীয় নির্বাচন। সম্মিলিতভাবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আজকের মতো অস্থিতিশীল ঘটনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।”
তারেক রহমান আরও আহ্বান জানান—
- গণতন্ত্রকামী সব পক্ষকে সংযম ও সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে,
- মব কালচার বা গোষ্ঠীগত সহিংসতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে,
- আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
শনিবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। বিএনপির মিডিয়া সেল তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ সময় তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে নুরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন এবং তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, নুরের মাথা ও নাকে আঘাত রয়েছে। চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন—
- হাসপাতালের পরিচালক,
- এনেস্থেসিয়ার প্রধান,
- ক্যাজুয়ালটি বিভাগের একজন চিকিৎসক,
- নাক-কান-গলা বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ,
- নিউরোসার্জারি বিভাগের একজন,
- চক্ষু বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “নুরের জ্ঞান ফিরেছে, তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত না হলে শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়।”
নুরুল হক নুর বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্যতম পরিচিত মুখ। ২০১৮ সালে ডাকসু নির্বাচনের সময় থেকে তিনি জাতীয়ভাবে আলোচিত। এরপর গণঅধিকার পরিষদ গঠন করে তিনি সরাসরি জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
এই হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
- বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে অত্যন্ত অস্থিতিশীল পর্যায়ে আছে,
- যে কোনো সংঘর্ষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে,
- বিরোধী পক্ষকে সহনশীলতা ও সংযম প্রদর্শন করতে হবে।
তারেক রহমান বিশেষভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন মব কালচার বা গোষ্ঠীগত সহিংসতার বিষয়ে। তার ভাষায়, “বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের মব কালচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল দেশ গড়তে হবে।”
এই বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে যে, বিএনপি আগামী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আইনানুগ এবং সহনশীল আন্দোলনের ওপর জোর দিতে চায়।
নুরুল হক নুর প্রথম আলোচনায় আসেন ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর। ছাত্র অধিকার আন্দোলন থেকে রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করে তিনি জাতীয়ভাবে পরিচিত হন। পরবর্তীতে তিনি গণঅধিকার পরিষদ গঠন করে জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হন।
নুরের সমর্থকরা মনে করেন, তার নেতৃত্বে তরুণরা বিকল্প রাজনীতির স্বপ্ন দেখছে। তবে বারবার হামলার শিকার হয়ে তিনি রাজনৈতিক ঝুঁকির মুখেও পড়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সহিংসতা বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
- এ ধরনের হামলা ও সংঘর্ষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,
- সরকারকে অবশ্যই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে,
- বিরোধী পক্ষগুলোকেও সংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালাতে হবে।
কাকরাইলে সংঘটিত সংঘর্ষ শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেতা আহত হওয়ার ঘটনা নয়; বরং এটি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি। নুরুল হক নুরের ওপর হামলা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য একটি নেতিবাচক বার্তা বহন করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে যে বার্তা দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। এখন সরকারের দায়িত্ব হলো—ঘটনার সঠিক তদন্ত করা এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা।
বাংলাদেশ যদি সত্যিই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এগোতে চায়, তবে মব কালচার ও সহিংসতার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।