ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিং বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী হলেও প্রার্থিতায় তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবণী জামান জ্যোতি বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পর সাইবার বুলিং ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে ঝুঁকি নিইনি। আন্দোলনে নারীদের অবদান আজও যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি, বরং আমরা ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছি।”
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮১৭ জন ছাত্রী (৪৮.৮%)। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপিসহ শীর্ষ চার পদে কোনো ছাত্রী প্রার্থী হননি। ২৫ শতাংশ নারী প্রার্থী হলেও ৫৬টি পদে কোনো নারী মনোনয়নই জমা পড়েনি। অনেক ছাত্রী ভীতি ও অপমানজনক অনলাইন প্রচারণার কারণে অংশগ্রহণ থেকে সরে এসেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ফাইজা মেহজাবিন বলেন, “উপযুক্ত নারীবান্ধব পরিবেশ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ থেকে ছাত্রীদের টার্গেট করে নিয়মিত বুলিং করা হয়। অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো কার্যকর সাড়া মেলেনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জেইউ আপডেট, জাবিয়ান সুশীল সমাজ, জেইউ ইনসাইডার্স, জাকসু নিউজ, জেইউ সার্কাজমসহ অন্তত ১০টি পেজ ও গ্রুপ থেকে বট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নারী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’-এর এজিএস (নারী) প্রার্থী মালিহা নামলাহ বলেন, “তপশিল ঘোষণার পর থেকেই কয়েকটি পেজ আমাকে টার্গেট করছে। বুঝে গেছি প্রচারে নামলে এই বুলিং আরও বাড়বে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, “ছাত্রীদের পোশাক থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবন পর্যন্ত নিয়ে কটাক্ষ করা হচ্ছে। বিষয়টি অনেক সময় চরিত্রহননের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে সরে যাচ্ছেন।”
এ অবস্থায় ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল অনলাইনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। ইসির সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার জানিয়েছেন, সাইবার ইউনিটকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং বিটিআরসিকে পেজগুলো শনাক্ত করে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হবে।
এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইন বুলিং ঠেকাতে শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদকে সভাপতি করে গঠিত কমিটি সাইবার বুলিংকে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
ডিজিটাল মিডিয়া গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান বলেন, “জাকসু নির্বাচনে সাইবার বুলিং দ্বিধাগ্রস্ত ভোটারদের সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে নারীদের জনপরিসরে আসার পথও আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে আরও দুর্বল করে তুলবে।”