ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে নিজেদের দলীয় অবস্থান নতুন করে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটি ইঙ্গিত দিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীজন অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে এবং নির্বাচনে জয়ী হলে একসঙ্গে সরকারও গঠন করতে পারে।
সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও গণপরিষদের দাবি অবাস্তব মনে করছে বিএনপি। দলটির মতে, সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, এর ওপরে সনদকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। এছাড়া আদালতের প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ করা নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী।
বিএনপি মনে করছে, যে সংস্কারগুলো সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে করা প্রয়োজন, তা পরবর্তী সংসদে সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে সরকার চাইলে নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কিছু সংস্কার কার্যকর করতে পারে।
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এবং এনসিপি যেসব শর্ত দিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য, তাতে বিএনপি গুরুত্ব দিচ্ছে না। জামায়াত সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে চাইলেও বিএনপি এ অবস্থানকে অবাস্তব বলে মনে করছে। অন্যদিকে এনসিপি নির্বাচনের আগে গণপরিষদ গঠন করে সেখান থেকেই সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপি কিছু ছাড়ও দিয়েছে। যেমন—
- এক ব্যক্তি টানা ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এ প্রস্তাবে সম্মতি।
- নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক কমিটির সুপারিশ মেনে নেওয়া।
- হাইকোর্ট বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে নেওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি।
- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করে কিছু নিয়োগ রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান।
- সরাসরি আসনে নারীদের অন্তত ৫ শতাংশ মনোনয়ন বিধান মেনে নেওয়া।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ভোট গ্রহণ করা হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, কিছু দলের গণভোট বা গণপরিষদ দাবিকে বিএনপি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে। তার মতে, এসব বক্তব্য নির্বাচনী মাঠ গরম করার জন্য দেওয়া হচ্ছে।
এ বৈঠকে কয়েকটি ইসলামী ঘরানার দলের সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি বলছে, যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে জোট গঠনের সুযোগ রয়েছে, তবে জামায়াতের সঙ্গে জোটের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভার্চুয়ালি যোগ দেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান।