জুলাই আন্দোলনের যাত্রাবাড়ী হত্যা মামলা: কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত জুলাই আন্দোলন ঘিরে বহু ঘটনা-বিবাদ এখনো চলমান। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সংঘটিত আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলা আবারও আলোচনায় এসেছে। এ মামলায় এবার আদালত জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর আগে এই মামলায় তৌহিদের বাবা, মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে পুলিশ তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করে। তাকে প্রথমে সিএমএম কোর্টের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আসামি তৌহিদ আফ্রিদির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রিমান্ডের আবেদনের পক্ষে ছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান। তিনি আদালতে বলেন, তৌহিদ আফ্রিদির সম্পৃক্ততা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। এজন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। তবে আদালত শেষ পর্যন্ত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। গ্রেপ্তারের খবর জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান।
এ মামলায় তার বাবা, মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় এবং রিমান্ড শেষে ২৩ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জুলাই আন্দোলনের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন পাকা রাস্তার ওপর পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মো. আসাদুল হক বাবু। এ ঘটনায় নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রাথমিকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে আলোচিত নামগুলোর মধ্যে অন্যতম মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি। এজাহারে নাসির উদ্দিনকে ২২ নম্বর এবং তৌহিদ আফ্রিদিকে ১১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তৌহিদ আফ্রিদি বাংলাদেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অন্যতম আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে তার বিপুলসংখ্যক অনুসারী রয়েছে। বিনোদনমূলক কনটেন্ট তৈরি করে তিনি তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়ায় তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আরও বেড়ে গেছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের নাম এ ধরনের মামলায় উঠে আসা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার জটিলতাকে নতুনভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।
সিআইডি জানায়, তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মামলার অন্যান্য আসামিদের ভূমিকা, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য বের করা সম্ভব হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, যেহেতু মামলাটি একটি রাজনৈতিক আন্দোলনকালীন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আসামিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি।
তৌহিদ আফ্রিদির আইনজীবীরা রিমান্ডের বিরোধিতা করে বলেন, তিনি নির্দোষ। জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ায় তাকে রাজনৈতিক কারণে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তবে আদালত তদন্তের স্বার্থে রিমান্ড আবেদন আংশিকভাবে মঞ্জুর করেন।
তৌহিদ আফ্রিদির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি বিনোদন জগতের মানুষ। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। তারা মনে করেন, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। একইসঙ্গে বাবাকে গ্রেপ্তারের বিষয়েও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া এই মামলাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার রায় বা তদন্তের ফলাফল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে বিরোধী আন্দোলন, গণআন্দোলন ও সরকারের অবস্থানের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
তৌহিদ আফ্রিদি জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ায় তার গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেক তরুণ ভক্ত তার পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছেন, আবার অনেকেই বলছেন—বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসুক।
সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের আলোচিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার সবসময় জনমনে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এটি শুধু আইনি নয়, সামাজিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
জুলাই আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় নতুন করে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডের ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে যে, মামলাটি এখনো তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে রয়েছে। আদালত তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করায় তদন্তে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তিনি জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ায় মামলাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ, ভক্ত এবং রাজনৈতিক মহলে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তে কী ধরনের তথ্য উঠে আসে এবং মামলার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যায়।