ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
গাজার আকাশ প্রতিদিনই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে। টানা প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। অবরুদ্ধ উপত্যকাজুড়ে কোথাও নেই নিরাপদ আশ্রয়। খাদ্য ও জ্বালানির সংকটে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রতিদিনের হত্যাযজ্ঞে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
বর্তমানে ইসরায়েল সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটিতে হামলা জোরদার করেছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অব্যাহত হামলায় শহরটি এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহরটি পুরোপুরি দখল করে হাজারো মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণের তথাকথিত “কনসেনট্রেশন জোনে” ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোর থেকে একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন খাদ্যের সন্ধানে।
গাজা সিটির আল-সাবরা এলাকায় এক বিমান হামলায় নিহত হন অন্তত তিনজন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের একজন সাংবাদিক—ইসলাম আল-কুমি। এছাড়া আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন।
কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানান,
“ইসরায়েল ভারী আর্টিলারি, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে আবাসিক ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই ভয়াবহ যে বোঝানো কঠিন। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে গাজার ভূগোল ও জনসংখ্যার বিন্যাস পাল্টে দিচ্ছে।”
হাজারো মানুষ ইতোমধ্যেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আবারও তারা গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন। তবুও অনেকে শহর ছাড়তে পারছেন না। অল্প কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রও এখন ইসরায়েলের টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি নাগরিক নোমান হামাদ বলেন—
“আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে কিছু চাই না। শুধু চাই আমাদের ঘরে ফিরতে—এটাই যথেষ্ট।”
অবরুদ্ধ গাজায় খানিকটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। হামাস জানিয়েছে, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত একটি যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় তারা সম্মতি দিয়েছে। সূত্রমতে, খসড়া চুক্তিতে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এ সময় গাজায় আটক কিছু ইসরায়েলি বন্দি এবং ইসরায়েলের কারাগারে আটক কিছু ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগের অভিজ্ঞতা খুব একটা আশাবাদী করে না। চলতি বছরের মার্চে পূর্বঘোষিত যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও ভয়াবহ হামলা শুরু হয়, যা এখন গাজাকে মানবিক বিপর্যয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে।