ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ২৬০টি ওষুধের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রথম বৈঠকে ওষুধের তালিকা হালনাগাদ, যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং উৎপাদকদের ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, অতীতে একাধিকবার ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হলেও কার্যকর তদারকির অভাবে তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এবার একটি শক্তিশালী জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব উঠেছে, যার প্রধান থাকবেন মন্ত্রী পদমর্যাদায়। প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ। তবে টাস্কফোর্সে কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারকের প্রতিনিধি না থাকায় শিল্পমালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, “যারা ওষুধ তৈরি করেন তাদের বাদ দিয়ে নীতি নির্ধারণ করলে চিকিৎসক, রোগী ও প্রস্তুতকারক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওষুধের দামে শুধু কাঁচামালের খরচ নয়, গবেষণা, মান নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিকায়ন খরচও বিবেচনায় নিতে হয়।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএর তথ্যমতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৪৪ টাকা ব্যয় হয় শুধু ওষুধে, যেখানে বৈশ্বিক গড় মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে দেখা যায়, ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে প্রায় ৬১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন।
১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতে ২৮৬টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা প্রণীত হয়েছিল। তবে কার্যকর হালনাগাদ হয়েছে মাত্র দু’বার—২০০৮ ও ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালে ২৮৬টির মধ্যে মাত্র ১১৭টির দাম নির্ধারণ করা হয়। সেগুলোর অনেকগুলোই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলো।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, “এবার ২৬০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হবে। মাঠপর্যায়ে তা কার্যকর হচ্ছে কি না, নিয়মিত তদারকি করা হবে। এ কাজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহযোগিতা করছে।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “শিল্প উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে কোনো কমিটি গঠন বা নীতি প্রণয়ন গ্রহণযোগ্য নয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা না হলে ওষুধ শিল্প ঝুঁকিতে পড়বে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, “তালিকা হালনাগাদ করে সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করা গেলে চিকিৎসা ব্যয় কমবে। এ জন্য ওষুধ প্রশাসনকে আইনি কাঠামোর মাধ্যমে শক্তিশালী করতে হবে, ভারতের মতো জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করা জরুরি।”
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, টাস্কফোর্সের মূল কাজ তিনটি—অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ, তালিকাভুক্ত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ এবং অন্যান্য ওষুধের জন্য সমন্বিত মূল্য প্রক্রিয়া তৈরি।
অন্যদিকে দেশে ওষুধের কাঁচামাল (এপিআই) শিল্প উন্নয়নে ১১ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান এর আহ্বায়ক। এক মাসের মধ্যে এই খাতের উন্নয়নে সুস্পষ্ট কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ সরকারি–বেসরকারি প্রতিনিধি রয়েছেন। তাদের দায়িত্ব হবে কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে কৌশল নির্ধারণ, প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের অংশ হিসেবে টেকসই নীতি প্রণয়ন।